রাজশাহী বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

রুয়েটের নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ

৫০ শতাংশ পদন্নতিতেও নয়-ছয়ের অভিযোগ


প্রকাশিত:
২১ মার্চ ২০২১ ১৭:১২

আপডেট:
২২ মার্চ ২০২১ ০৪:৪৯

রুয়েটের মূলফটক

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) বিভিন্ন পদে চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে তড়িঘরি করে ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যূ করে তা সময়মত প্রার্থীদের নিকট না পৌঁছানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া নিয়োগে সরকারি বিধি মোতাবেক ৫০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদানের কথা থাকলেও যোগ্যদের পদন্নতির বিষয়টিতেও পাওয়া গেছে নয়-ছয়ের অভিযোগ।

সূত্রে জানা গেছে- রুয়েটের বিভিন্ন বিভাগে সহযোগী, সহকারী ও প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ইন্সট্রুমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, জুনিয়র ইন্সট্রুমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, সহকারী প্রোগ্রামার, নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর), বিভিন্ন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, জুনিয়র সেকশন অফিসার, ইলেকট্রিশিয়ান, অফিস সহায়ক পদসহ মোট ৭৮টি পদে নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রুয়েট প্রশাসন। এসব পদের মধ্যে কিছু পদে নিয়োগ পরীক্ষা ও ভাইভা বোর্ড সম্পন্ন হয়েছে। আর কিছু পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সূত্র জানায়, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই রুয়েটে সকল পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

তবে অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী- যেকোনো পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট পদের প্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত তারিখের অন্ততপক্ষে ১৫ কার্যদিবস আগে ইন্টারভিউ কার্ড সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের ঠিকানায় পাঠানোর কথা। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতেই সরকারি এই নিয়ম মানা হয়নি। অধিকাংশ পদের নিয়োগ পরীক্ষার নির্ধারিত তারিখের ৫-৭দিন আগে প্রার্থীদের ঠিকানায় ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যূ করা হয়েছে। এর ফলে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রত্যাশি ইন্টারভিউ কার্ড হাতে পেয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের কারণেই বেশ কিছু পদে নিয়োগ পরীক্ষার দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত নোটিশবোর্ডে ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, চাকরিপ্রার্থীর কোনো আত্মীয়-স্বজন নিয়োগবোর্ড কিংবা নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রমে যুক্ত না থাকার কথা। কিন্তু পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক ও বর্তমান ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. রবিউল আওয়ালের স্ত্রী একজন চাকরিপ্রার্থী। অথচ তিনি (রবিউল আওয়াল) নিয়োগবোর্ডের সদস্য। স্ত্রীকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার জন্যই তিনি নিয়োগবোর্ডের সদস্য হয়েছেন বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়াতে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যা রুয়েটের প্রচলিত গেজেটের ১৯ জুলাই, ২০০৩ এর চাকুরির শর্তাবলী ৪৪ এর (২) ধারার পরিপন্থী।

জানা গেছে, রুয়েটে নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) পদে আগামী ২৭ মার্চ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অভিযোগ রয়েছে, এই পদে মো. নোমান পারভেজ নামে বিএনপি-জামায়াতের এক প্রার্থী রয়েছে যিনি রুয়েটের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহাদৎ হোসেনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। শাহাদৎ হোসেন ও নোমান পারভেজ দুইজনই নগরীর ভদ্রা আবাসিক এলাকার একই ফ্ল্যাটের মালিক বলেও জানা গেছে। তাই নোমানকে নিয়োগ পাইয়ে দিতে তিনি জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এক চাকরিপ্রত্যাশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদোন্নতি পাওয়া আমার বৈধ অধিকার। কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমার পদোন্নতি হচ্ছে না।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও নিয়োগ সিলেকশনবোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. রবিউল আওয়ালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীকে নিয়োগে তদবিরের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রুয়েটের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, যে অভিযোগ করেছে তার নাম কি? আপনার কোনো অভিযোগ সঠিক না। আগে বিষয়টি সম্পর্কে জানেন তারপ আমার সঙ্গে কথা বলেন।’

এব্যাপারে রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম সেখ জানান, নিয়মের মধ্যে থেকে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের বাইরে তারা কিছুই করছেন না। তবে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে বেকার যুবকদের চাকরি দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা রয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তারা সেই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছেন বলেও জানান রুয়েট উপাচার্য। 

আরপি/এআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top