রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাতের আঁধারে দুই শতাধিক আম গাছ কর্তণ


প্রকাশিত:
১৫ আগস্ট ২০২১ ২১:২৬

আপডেট:
১৫ আগস্ট ২০২১ ২১:৪৩

ছবি: বিভিন্ন জাতের আম গাছ কেটে ফেলে দূর্বৃত্তরা

মাত্র কয়েকদিন আগেও থোকায় থোকায় ঝুলছিল আম্রপালি, গৌড়মতি, বারি-৪, হিমসাগরসহ নাবি জাতের বিভিন্ন আম। কিন্তু ৭-৮ বছর বয়সী গাছগুলো থেকে আম পাড়া শেষ হতেই প্রায় দুই শতাধিক আম গাছ কেটে ফেলেছে দূর্বৃত্তরা। শত্রুতার জেরে স্থানীয় গরুর রাখালরা একত্রিত হয়ে রাতের আঁধারে গাছগুলো কেটেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাগান মালিক কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান।

মঙ্গলবার (১০ আগষ্ট) দিবাগত রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের পাগলা নদী সংলগ্ন ৪ ও ৫ নং বাঁধের মধ্যবর্তী আম বাগানের এসব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কলেজ শিক্ষকের ৬ বিঘা জমিতে লাগানো এসব আম গাছ রাতের আঁধারে দা ও কুড়াল দিয়ে কেটে ফেলে দূর্বৃত্তরা। আর বাগান মালিক কামরুজ্জামান এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট অভিযোগও করেছেন।

আম বাগানের মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, পাগলা নদী সংলগ্ন ৪ ও ৫ নং বাঁধের মধ্যবর্তী এলাকায় অনেক বড় বড় আম বাগান রয়েছে। কিন্তু পদ্মার চর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রত্যেক বছরের এই সময়ে গরু পালের রাখালরা আম বাগানে গরু চরায়। চরানোর সময় গরুতে ঘাস খাওয়ার পাশাপাশি আমের পাতা, ডাল ও গাছের ব্যাপক ক্ষতি করে। এনিয়ে এই এলাকার সকল বাগান মালিকরা ২০১৮ সালে রানিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মহসিন আলীকে অভিযোগ করেছিলেন।

এরই প্রেক্ষিতে অভিযোগের পর মহসিন আলী চেয়ারম্যানের পরামর্শে সকল বাগান মালিকরা মিলে আমসহ মাঠের বিভিন্ন ফসল রক্ষা করতে ২০ সদস্যের একটি মাঠ রক্ষা কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কলেজ শিক্ষক কামরুজ্জামান। বাগানের সকল আম পাড়া শেষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বাগানে গরু না চরানোর নির্দেশ দিয়ে মাঠ রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে গত ৮ আগষ্ট রোববার মাইকিং করা হয়। তার একদিন পরই (১০ আগস্ট) মঙ্গলবার মাঠ কমিটির কোষাধ্যক্ষ কলেজ শিক্ষক কামরুজ্জামানের আম বাগানের প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন জাতের আম গাছ কেটে ফেলে দূর্বৃত্তরা।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার হাট রামচন্দ্রপুর গ্রামের মাওলানা মরহুম মো. নজরুল ইসলামের ছেলে কলেজ শিক্ষক কামারুজ্জামান বলেন, বাগানের সবগুলো গাছ মাঝখান থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে গাছগুলো কাটা হয়েছে। তাই সুনির্দিষ্ট করে কাউকে অভিযুক্ত করা যাচ্ছে না। আম্রপালি, গৌড়মতি, বারি-৪, হীমসাগরসহ উন্নত নাবি জাতের বিভিন্ন আমের গাছ লাগিয়ে বাগান গড়ে তুলেছি। এ বছরও প্রতেকটি গাছে প্রচুর পরিমানে আম এসেছিল। তিল তিল করে গড়ে তোলা আম বাগান রাতের আঁধারে শত্রুতা করে নিমিষেই কেটে দিল একদল দূর্বৃত্ত।

তিনি আরও বলেন, বাড়ির পাশের কলেজে চাকুরি করার সুবাদে বেশিরভাগ সময় অবসরে বাড়িতে থাকি। সেই সূত্রে অধিকাংশ সময় বাগানে এ সকল আম গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতাম। আমার সন্তানের মত করে গড়ে তোলা গাছগুলো কেটে আমার বুকের পাঁজর ভেঙে দিয়েছে তারা। এতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। কয়েক বছর থেকে আম বাগানে গরু চরিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে আসছিল। নিষেধ করতে গেলে গরুর মালিক ও রাখালরা বিভিন্ন উচ্চবাচ্য করে এবং হুমকি-ধমকি দেয়। বাধ্য হয়ে মাঠ রক্ষা কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনা করে এলাকায় মাইকিং করা হয় বাগান এলাকায় গরু না চরানোর জন্য। এতে করে আমার উপরেই গরুর রাখালরা ক্ষিপ্ত হয়ে রাতের আঁধারে আম গাছগুলো কেটে ফেলেছে।

এ বিষয়ে মাঠ রক্ষা কমিটির সভাপতি আকবর আলী বিশ্বাস জানান, ঘটনাটি যেহেতু রাতের অন্ধকারে হয়েছে সেহেতু সুনির্দিষ্ট করে কাউকে অভিযুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত যে গরু চরাতে মানা করে মাইকিং করায় গরুর মালিক ও রাখালরা এই গর্হিত কাজটি করেছে। মাঠ রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে সন্দেহজনক কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

তবে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে রানিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. মহসিন আলি বলেন, বাগান মালিক ও মাঠ রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে আমার কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। মাঠ রক্ষা কমিটির সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে আমি শুরু থেকেই অবহিত। আর রাতের অন্ধকারে গাছ কাটার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও অমানবিক একটি অপকর্মের দৃষ্টান্ত। আর তাই এর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

 

আরপি/এসআর-১১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top