রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১

বরেন্দ্রের আম বাগানে টিউলিপের হাতছানি


প্রকাশিত:
২৯ জানুয়ারী ২০২২ ০৯:১৮

আপডেট:
২৯ জানুয়ারী ২০২২ ২১:৪৭

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত রাজশাহী অঞ্চলের সর্বত্রই আমের সমান বিচরণ। গ্রামীন এলাকায় একটু পর পরই চোখে পড়ে আমের সুবিশাল বাগান। রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আম। আমকে ঘিরেই স্বপ্ন বুনেন এই এলাকার জনপদ।

তবে আমের পাশাপাশি টিউলিপ চাষের স্বনির্ভর স্বপ্ন দেখছেন পবা উপজেলার ফুল প্রেমিক হাসান আল সাদী পলাশ। রাজশাহী নগরীর অদূরে পবা উপজেলার দামকুড়া এলাকার পলাশবাড়িতে প্রধান রাস্তার পাশেই গড়ে উঠেছে ড্রিমার্স গার্ডেন।

গার্ডেনের বিশাল আম বাগানে অভিনব পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে বিদেশী প্রজাতির এই ফুল। টিউলিপ ছাড়াও বছরের ১২ মাসই পাওয়া যাবে কোন না কোন প্রজাতির ফুল। নানা প্রজাতির ফুল দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ৮ বিঘা জমির বাগানটি।

তথ্যমতে, টিউলিপ দৃঢ়ভাবে এবং অবিনশ্বর নেদারল্যান্ডসের সাথে যুক্ত। সেখানেই অধিক পরিমাণে জন্মায় ফুলটি। আবার বেশিরভাগের মতে টিউলিপের আসল জন্মভূমি কাজাখস্তান। অটোমান সাম্রাজ্যের সময়কালে ফুলটি রাশিয়ার দিকে ব্যাপক পরিচিতি পায়। শীত প্রধান দেশ ও এশিয়া মহাদেশের ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ গুটিকয়েক দেশ ছাড়া দৃষ্টিনন্দন টিউলিপ ফুলের দেখা মেলা ভার।

এবার সেই টিউলিপ তার রূপের শোভা ছড়াচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলে। ড্রিমার্স গার্ডেনের পরিচালক হাসান আল সাদী পলাশ নেদারল্যান্ডে থেকে আমদানি করেন সেই ফুলের চারা। অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই শুরু করেছেন বাণিজ্যিক চাষাবাদ।

তিনি বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের সর্বত্রই আমের বাগানে পূর্ণ। কিন্তু সেই আম বাগানের নিচের জায়গাগুলো সারা বছর অব্যবহৃত থাকে। এই পতিত জায়গাগুলোকে কাজে লাগানোর ভাবনা থেকেই আমার এমন চিন্তা আসে। আর সেই অনুযায়ীই এমন উদ্যোগ নেওয়া।

শুরুর দিকের কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় বড় পরিসরে শুরুর ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয় নি। কাছের কোন মানুষই বিষয়টিকে সমর্থন দেননি। আম বাগানের নিচে ফুলের বাগান বিষয়টিকে নানা জনে নানা রকম নেতিবাচক হিসেবে বুঝাতো। তবুও মনের সঙ্গে এক প্রকার জিদ করেই কাজে নেমে পড়া। আশা করছি সফলতার মুখ দেখতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে কয়েক প্রজাতির টিউলিপের এক হাজার চারা রোপন করা হয়। এখন পর্যন্ত ফলাফল ভালো। ফুল আসাও শুরু হয়েছে। আগামী বছর থেকে প্রদর্শনীর পাশাপাশি ফুল ও চারা বিক্রি করতে পারবেন বলেও আশাবাদী তিনি।

আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-২০১৮ পর্যন্ত বরেন্দ্র অঞ্চলে ৭০ হাজার ৩৪৬ হেক্টও জমিতে আমের বাগান রয়েছে। গত কয়েকে বছরে আরও কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান বেড়েছে বলে মনে করছেন এই কৃষি উদ্যোক্তা। এ বিশাল পরিমাণ আম বাগানের বেশির ভাগই পতিত রয়েছে। এর সামান্য অংশও ফুল চাষের মতো অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা গেলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। সেই সাথে নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, টিউলিপ চাষে যদি সফলতা আসে তাহলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে ফুলটির চাষ শুরু করবো। শীত প্রধান অঞ্চলের হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবানের পাশাপাশি বর্ষজীবী ও বসন্তকালীন ফুলটি সৌন্দর্য্য বর্ধণ করে।

জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. মোজদার হোসেন বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে টিউলিপ বা ফুল চাষের ঘটনা এটিই প্রথম। এক্ষেত্রে যদি লাভবান হওয়া যায় তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

 

আরপি/এসআর-০৭



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top