রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


চাঁপাইনবাবগঞ্জে ধানের জমিতে প্রভাব ফেলেছে ইয়াস


প্রকাশিত:
৩০ মে ২০২১ ০০:৫৬

আপডেট:
৩০ মে ২০২১ ০০:৫৭

ছবি: তলিয়ে যাওয়া ধানের জমি

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সারাদেশের ন্যায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকাল থেকে শুক্রবার (২৮ মে) ভোর পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার নিম্নাঞ্চলের অনেক ধান ক্ষেত। কয়েকটি বিল থেকে ভেসে গেছে কৃষকদের কেটে রাখা ধান। বেশিরভাগ কৃষকের ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেকের আঁটি বেঁধে রাখা ধান ভেসে গেছে পানির স্রোতে। জেলার সদর উপজেলার শংকোপুরায় অর্ধশতাধিক কৃষকের কয়েক বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে পানিতে।

সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের গুনিরমোড় গ্রামের শংকোপুরা বিলে শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিল জুড়ে শুধু পানি আর পানি। অথচ বৃহস্পতিবার সকালেও বিলের বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে ছিল সোনালী ধান। এই বিলের বেশির ভাগ ধান কেটে বেঁধে রাখা হয়েছিল শুকানোর জন্য। কিন্তু শেষ মূহুর্তে এসে বৃষ্টির পানিতে ধান ভেসে যাওয়ায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন শংকোপুরা বিলের ধানচাষিরা। অনেকের মোট ধানের প্রায় সিংহভাগই ভেসে গেছে পানিতে।

এ বিষয়ে শংকোপুরা বিলের কৃষক হযরত আলী জানান, এই বিলের অন্তত কয়েকশ বিঘা জমির ধান কেটে ও বেঁধে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিন-রাতের টানা বৃষ্টিতে পুরো বিলের ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বেশিরভাগই ধান ভেসে চলে গেছে পানির স্রোতে। পানি নামার কোনো সুব্যবস্থা না থাকার কারণেই এই সমস্যা হয়েছে।

পাশের গ্রাম ঘুঘুডিমার কৃষক জমশেদ বলেন, এই বিলে সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ধান চাষাবাদ করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে দুই বিঘা জমির সম্পূর্ণ ধান ভেসে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়লাম। এছাড়া দিনব্যাপী বৃষ্টির কারণে কেটে রাখা ধানগুলো নিরাপদে সরিয়ে নিতেও পারিনি। শুক্রবার সকালে জমির অবস্থা দেখতে এসে দেখি ২ বিঘা জমির একটা ধানও নেই।

৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে কাবির আলী। বাবার তলিয়ে যাওয়া ধান সংগ্রহ করতে মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে বিলে এসেছে সে। সকাল থেকে বুক সমান পানিতে হেঁটে হেঁটে বাবার সঙ্গে ধান রাস্তার পাড়ে নিয়ে আসছে কাবির। সে জানায়, বাবা কয়েকদিন থেকেই মাঠ থেকে ধানগুলো নিয়ে যাব যাব করছে। কিন্তু গরুর গাড়ি না পাওয়ায় নিয়ে যেতে পারছে না। শনিবার গরুর গাড়িতে ধানগুলো বোঝায় করে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হল না।

মাদরাসা শিক্ষক আকতারুল ইসলাম বলেন, বিলে চাচার ২ বিঘা ধান ছিল। বৃষ্টির পানিতে সব ধান তলিয়ে গেছে। সঙ্গে ৩ ভাই ও চাচাকে নিয়ে এখন তলিয়ে যাওয়া ধানগুলো জালে করে ভাসিয়ে রাস্তার ধারে নিয়ে আসছি। এ বছর বিলের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ইয়াসের প্রভাবে দিনব্যাপী হওয়া বৃষ্টির পানিতে ধান তলিয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক কৃষক।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জেলার বেশিরভাগ ধান ঘরে উঠে গেছে। তবে ইয়াসের প্রভাবে হঠাৎ করে সারাদিন ও রাতের বৃষ্টিতে কয়েক জায়গায় কেটে স্তুপ করে রাখা ধান তলিয়ে ও ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি।

উল্লেখ্য, জেলায় এ বছর ৪৯ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে এবং ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।

 

 

আরপি/এসআর-২১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top