ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর, এসিল্যান্ডসহ আহত ৬
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বলদীপাড়া-হলদীঘর গ্রামের শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান ও স্থানীয় নারী-শিশুসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন।
রোববার (২১ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা ঐতিহ্যবাহী বলদিপাড়া-হলদিঘর খেলার মাঠে মাটি ভরাটের উদ্দেশ্যে প্রশাসন গেলে স্থানীয় জনগণ বাধা দেন। মাঠ রক্ষায় গ্রামবাসী প্রবেশপথে গাছের গুঁড়ি ও বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে। পরে ব্যারিকেড ভেঙে জোড় করে প্রশাসন প্রবেশ করতে চাইলে গ্রামবাসীর সঙ্গে প্রশাসনের সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়।
সংঘর্ষে শাহজাদপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ সময় স্থানীয় পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন (১০), মনিজা খাতুন (৩০), আলেয়া (৪০), ওজুফা খাতুন (৩৫), মরিয়ম বেগমসহ (৫০) অন্তত ৬ জন আহত হন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় নাসরিন খাতুন, বিকেএসপির নিয়মিত খেলোয়াড় নয়ন তারা, রত্না খাতুন, জয়গন বেগম, আকবর মণ্ডল, আব্দুল হাইসহ মাঠ রক্ষায় আন্দোলনকারীরা সাংবাদিকদের জানান, কয়েক পুরুষের শৈশব, কৈশোর, যৌবনের স্মৃতিমাখা প্রায় দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী কয়েক গ্রামের একমাত্র খেলার মাঠটি রক্ষায় আশপাশের ছয়টি গ্রামের হাজারো নারী-পুরুষ, যুবক, বৃদ্ধা গত ১৪ জুলাই মানববন্ধন করে।
মানববন্ধন থেকে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়, ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ রক্ষা করে অন্যত্র যেন সরকারি ঘর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু জনগণের যৌক্তিক দাবি অস্বীকার করে প্রশাসন জোর করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করতে আজ (২১ আগস্ট) মাটি ভরাটের উদ্দেশ্যে এসে নির্বিচারে নারী ও শিশুদের ওপর আঘাত করে। পরে উপস্থিত জনতা রাস্তার বালু চোখেমুখে নিক্ষেপ করে প্রতিরোধের চেষ্টা করে।
গ্রামবাসী আরও জানান, প্রশাসনের সঙ্গে গাড়াদহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ কিছু অস্ত্রধারীরাও আমাদের ওপর হামলা চালায়। পরে প্রতিরোধে টিকতে না পেরে টিছু হটে তারা।
এদিকে ঘটনার পর থেকে বলদিপাড়া-হলদিঘর এলাকার ব্যাবসায়ীদের তালগাছি হাটে থাকা সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে এবং হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
অপরদিকে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য রোববার (২১ আগস্ট) সকালে আমি ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান কায়েমপুর ইউনিয়নের বলদিপাড়া হলদিঘর এ সরেজমিন পরিদর্শনে যাই।
এ সময় সেখানে এলাকার উশৃঙ্খল কিছু উঠতি বয়সী যুবক ও নারীরা পথ রোধ করে ও অশালীন আচরণ করে। এক পর্যায়ে পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমার গাড়ি ভাঙচুর করে এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে অ্যাসিল্যান্ডের মাথা ফেটে যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মাসুদ রানা জানান, শাহজাদপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমানের আঘাত বেশ গুরুতর। তার মাথায় ৮টি সেলাই দেওয়া হয়েছে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহজাদপুরের বাইরে থাকায় এ ঘটনায় এখনো কোন মামলা হয়নি। ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) হাসিবুল ইসলাম বলেন, পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।
আপি/ এসএইচ ১৫
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: