রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ


প্রকাশিত:
২৩ জুন ২০২০ ১৫:০০

আপডেট:
২৩ জুন ২০২০ ১৫:০৩

ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। জন্মের পর থেকে বেশিরভাগ সময়ই গেছে লড়াই-সংগ্রামে। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র—সবই দেখেছে দলটি। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন যাত্রা করা আওয়ামী লীগ ৭১ বছর পূর্ণ করল মঙ্গলবার।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরে তা শুধু আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে। পরবর্তীকালে দেশের অন্যতম প্রাচীন এই দল প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠার শুরুতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হক।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। ১৯৫২–এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯–এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ—সব অর্জনই হয়েছে এই দলের নেতৃত্বে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে কাজ শুরু অগ্রভাগেও ছিলেন আওয়ামী লীগেরই নেতাকর্মীরা।

তবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে চলছিল, ঠিক তখনই আঘাত হানে ঘাতকেরা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তারপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের খড়গ নেমে আসে।

১৯৮১ সালে বিদেশে অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন নেতা–কর্মীরা। এরপর ওই বছরের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। এরপর থেকে তিনি শক্ত হাতে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। মাঝে এক মেয়াদ ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও দলের অনেক নেতাকর্মী হতাহত হন। ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের টানা ১২ বছরের শাসনামলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দেশ-বিদেশে আলোচিত হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মহাকাশে প্রেরণ করা হয়েছে নিজস্ব স্যাটেলাইট। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনেও সাফল্য এসেছে। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের সাফল্য সারা বিশ্বে আলোচিত।

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে তিনি বলেছেন, বাঙালি জাতির প্রতিটি মহৎ, শুভ ও কল্যাণকর অর্জনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে প্রিয় বাংলাদেশ।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবার ঘটা করে কর্মসূচি পালন করা হলেও এবার করোনাভাইরাসের কারণে কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। এ ভাইরাস দেশে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই জনসমাগমের সকল কর্মসূচি এড়িয়ে চলছে আওয়ামী লীগ।

এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।

বিকেলে থাকছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদ, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদ, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে মৃত্যুবরণকারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া ও মোনাজাতের কর্মসূচি।

টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচি
সকালে টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবে।

টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।

এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনলাইনে থাকছে ‘গণ-মানুষের দল আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় এ অনুষ্ঠানে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নেবেন।

এতে আলোচক হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খাঁন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন সুভাষ সিংহ রায়।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ।

 

আরপি/ডিজে



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top