রাজশাহী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


মহিলা আ.লীগের তালিকা করতে গিয়ে মারধরের শিকার সাবেক ইউপি সদস্য


প্রকাশিত:
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:১৯

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ০০:০৫

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে জেলা কমিটির নির্দেশে ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে মহিলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করতে গিয়ে হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন সাবেক এক নারী ইউপি সদস্য। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও মামলা নেয়নি ভোলাহাট থানা পুলিশ। চলতি মাসের ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেলে ভোলাহাট উপজেলার আলালপুর দারুস সুন্নাত দাখিল মাদরাসায় এই মারধরের ঘটনা ঘটে।

মারধরের ঘটনায় আহত ওই নারী ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মোসা. সলেনুর বেগম। আর মহিলা আওয়ামী লীগের তালিকা করতে গিয়ে ভোলাহাট উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মোসা. সাহাজাদী বিশ্বাস তার ওপর এই হামলা করিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

জানা যায়, গত প্রায় দুই বছর ধরে মহিলা আওয়ামী লীগের ভোলাহাট উপজেলা কমিটি নেই। এছাড়াও ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়েও নেই কোন কমিটি। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠনের লক্ষ্যে প্রাথমিক তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয় মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী ও সাবেক ইউপি সদস্য সলেনুর বেগমকে। জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাকিনা খাতুন পারুল তাকে এই নির্দেশ দেন বলে জানান সলেনুর বেগম। পরে ভোলাহাট উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে কয়েকজন কর্মী নিয়ে এই কাজ শুরু করেন সলেনুর বেগম।

আরও পড়ুন: আ.লীগের নেতারা আমেরিকা যাবেন না, দাবি মির্জা আজমের

প্রত্যক্ষদর্শী ও মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী তানজিলা খাতুন, চম্পা খাতুন, মালেকা বেগম জানান, ঘটনার দিন মাদরাসায় যায় আমরা। তখনও সভা শুরু হয়নি। এরই মধ্যে হঠাৎ করে যুব মহিলা লীগের নেত্রী সাহাজাদী বেগম উপস্থিত হয়ে সলেনুর বেগমের সালামের উত্তর না দিয়ে বরং আমাদের সকলের সামনে চর-থাপ্পড় ও কিল-ঘুঁষি মারা শুরু করেন। পরে আমরা সলেনুর বেগমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি।

এ বিষয়ে মারধরের শিকার সাবেক ইউপি সদস্য সলেনুর বেগম বলেন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাকিনা খাতুন পারুল আপার নির্দেশে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে উঠান বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরার পাশাপাশি প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ শুরু করি। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় গিয়ে ৫১ জনের নামের তালিকা তৈরি করি। এই কাজ করার আগে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিমা খাতুন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করেছি।

তিনি আরও বলেন, জামবাড়িয়া, দলদলী ও গোহালবাড়ি ইউনিয়নের কাজ শেষ করেছি। ভোলাহাট সদর ইউনিয়নে কাজ শুরু করেছি কয়েকদিন আগে। গত শনিবার আলালপুর মাদরাসায় উঠান বৈঠক করার সময় সাহাজাদী হঠাৎ করেই এসে আমাকে মারধর শুরু করে। আমাকে বলছে, তুই এখানে কেন এসেছিস? কে তোকে এসব কাজ করতে বলেছে? এরপর তাকে বসার জন্য চেয়ার এগিয়ে দেয়া মাত্রই চর-থাপ্পড় মারতে থাকে।

কান্নাজড়িত কন্ঠে আহত সলেনুর বেগমের স্বামী ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজনই সাবেক ইউপি সদস্য। আমরা আওয়ামীলীগের জন্য কাজ করি। জেলা নেতৃবৃন্দের নির্দেশে দলের জন্য এই কাজটি করতে গিয়ে সলেনুর বেগমকে মারধর করেছে। আমি দলের কাছে এর সুবিচার চাই।

ভোলাহাট উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, ঘটনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। মাদরাসায় ঢুকেই সাহাজাদী সলেনুর বেগমকে তিন-চারটা চর মেরেছে। বাধা দিতে গেলে আমাকেও নানারকম গালিগালাজ করেছে অশ্লীল ভাষায়। যুব মহিলা লীগে থাকা সত্বেও মহিলা আওয়ামী লীগের কাজে বাধা দিচ্ছে। গায়ের জোরে সব দখলে নিতে চাই। এরা দলে থাকলে ক্ষতি হবে। তাই তার বহিস্কার চাই।

ভোলাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আলী শাহ বলেন, এটি খুবই খারাপ ও ন্যাক্কারজনক কাজ। আশা করি এই ঘটনায় মহিলা আওয়ামীলীগ তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা চাই, যে মেয়েটি কাজ করছে তাকে সহযোগীতা করতে। নির্বাচনের আগে তৃণমূল পর্যায়ে এমন উদ্যাোগ নেয়া জরুরি। অথচ সাহাজাদী নিজেও করবে না, আবার অন্যকেও করতে দিবে না।

উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল গাফফার মুকুল জানান, সলেনুর বেগম আমাকে আগেই জানায় এই কাজটি সম্পর্কে। এই উপজেলায় মহিলা আওয়ামী লীগের তেমন কোন কার্যক্রম নাই। তাই আমরা স্থানীয় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারিনা। তাই আমরা প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ শুরু করতে বলি। এমনকি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশনা দেয়া হয় একাজে সহযোগিতা করার জন্য। অথচ তাকে মারধর করা হয়েছে। সাহাজাদী এটি করতে পার না। এভাবে সংগঠনের কাজ করতে গিয়ে মেয়ে মানুষের গায়ে হাত দেয়া অপরাধ। এটি সংগঠনের পরিপন্থী কাজ আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাকিনা খাতুন পারুল বলেন, তালিকা করতে গিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আমি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কর্মীদের সকল উপজেলায় ওয়ার্ড ইউনিয়নের কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছি। আগামীতে নির্বাচন উপলক্ষে এসব কাজ করতে বলা হয়েছে। মূল সংগঠনের সহযোগিতা নিয়ে এই কাজ করতে বলেছি। সাহাজাদীকে কাজ করার অনুমতি দেয়া হলেও সে করেনি। বরং আরেক নারী করতে গেলে তাকে মারধর করেছে। আমার কর্মীকে যেভাবে মারধর করেছে তার তীব্র নিন্দা জানায়। কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন: ব্যাটিং ব্যর্থতায় বড় পরাজয় টাইগারদের

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, কয়েক মাস পরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে তালিকা করে কমিটি গঠনের কাজটি ভালো এবং মূল দলের জন্য সহায়ক। এমন সময়ে এই উদ্যোগ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আগামী ভোটে এটি কাজে আসবে। ভোটে এর প্রভাব রয়েছে ব্যাপকভাবে। এই কাজ করতে গিয়ে মারধর করা মারাত্মক অপরাধ। আমরা চাই সাহাজাদীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ বিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাজাদী বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।

ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, এ বিষয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ 

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top