রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয় দিতে পারতেন না: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী


প্রকাশিত:
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:০৫

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০২:২৯

ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিতে পারতেন না বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ নিউ মার্কেট অডিটরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কোথাও কোনো অফিস-আদালতে বলা যেত না, আমি মুক্তিযোদ্ধা। আর এখন বুক ফুলিয়ে বলা যায় আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। শেখ হাসিনা এটা করেছেন। শেখ হাসিনা থাকতে মুক্তিযোদ্ধারা কষ্টে থাকবে না। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, আমি থাকতে মুক্তিযোদ্ধারা কষ্টে থাকবে না।’তিনি যেটা বলেন, সেটা করেন।

সরকারের নানা উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছরসহ মোট সাড়ে ২২ বছর আমরা ক্ষমতায় আছি। এই সময়ে কী কী হয়েছে আমরা এর পাই-টু-পাই হিসাব দেব। কোন জেলায়, কোন উপজেলায়, ইউনিয়নে, ওয়ার্ডে কী কী করেছি সবকিছুর হিসাব দেব। অন্যরা ২৯ বছর ক্ষমতায় থেকে কী করেছে ওদেরকে তার হিসাব দিতে হবে। যে কেউ হিসাব করে দেখলে বুঝতে পারবে শেখ হাসিনার সময় সে কী পেয়েছে, আর আগে কী পেয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা মুসলমানদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সেই আন্দোলন করেছেন। তারপর পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছিল। পাকিস্তানের মোট আয়ের ৮০ ভাগ আমরা উপার্জন করলেও আমাদের জন্য ব্যয় করা হতো ১৮ ভাগ আর বাকি ৮২ ভাগ ব্যয় করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য। আমরা জনসংখ্যায় ৫৬ ভাগ ছিলাম; কিন্তু সেনাবাহিনীতে আমাদের অংশগ্রহণ ছিল ৭ ভাগ, ৯৩ ভাগ-ই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি, এটা ছিল তাদের ইনসাফ।

মোজাম্মেল হক বলেন, বৈষম্যের কারণে বঙ্গবন্ধু আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ১৯৬৬ সালে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে মুক্তির সনদ ‘ছয় দফা’ ঘোষণা করেন। এর পক্ষে জনগণ আন্দোলন গড়ে তোলে। কিন্তু আইয়ুব খান অস্ত্র দিয়ে সেই আন্দোলন মোকাবিলা করে। আন্দোলন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। জনগণ এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে আনে। গণঅভ্যুত্থান হয়; পেছনের দরজা দিয়ে আইয়ুব খানের পতন হয়।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসনে জয়ী হয়ে একক সংখ্যাগষ্ঠিতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা ক্ষমতা দেয় না। সংসদ বসার কথা ছিল, কিন্তু বসে না। কারণ, তারা বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা দেবে না। সরকার আরও নিপীড়নমূলক আচরণ করতে থাকে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলার নির্দেশ দেন। ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বাংলার মাটিতে একজন পাকিস্তানি সৈন্য থাকা পর্যন্ত তিনি আমাদেরকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী আমাদের সামনে হাঁটু গেড়ে আত্মসমপর্ণ করে। এই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, বিকৃত হতে দেওয়া যাবে না বলেও উল্লেখ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী।

বিএনপির সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, যারা এতিমের টাকার লোভ সামলাতে পারে না, তারা কীভাবে ১৮ কোটি মানুষের সম্পদের লোভ সামলাবে। তাদের কাছে ১৮ কোটি মানুষের সম্পদ নিরাপদ নয়। ভুল ত্রুটি সবারই হয়, তাই বলে দুটি আর ৫০টি এক নয়। কারা ভালো দেশ চালিয়েছে আর কারা খারাপ চালিয়েছে সেটা সবাইকে বিচার করে দেখার আহ্বানও জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এফ এম সুফিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল জব্বার বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মনসুর আলী, বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মন্ত্রী বাগমারায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে মন্ত্রী বাগমারায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন করেন।

 

 

আরপি/এসআর-০৮



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top