রাজশাহী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


রাজশাহীতে বছরে সিআরপি-র চিকিৎসা পাবে ১২ হাজার রোগী


প্রকাশিত:
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:২১

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:১৯

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

পক্ষঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) সাভার সদর দফতরের আদলে প্রথমবারের মতো আঞ্চলিক পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত পেতে যাচ্ছে রাজশাহীবাসী। রাজশাহী নগরীর অদূরে পবা উপজেলার কাটাখালি পৌরসভার কাপাসিয়ায় ১৫ বিঘা জমির ওপর এই পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হবে। গত বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পরিবারের পক্ষ থেকে ওই জমি দান করা হয়।

‘সিআরপি-রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার’ হবে এই পুনর্বাসন কেন্দ্রের নাম। এটি প্রতিষ্ঠিত হলে প্রতি বছর এ অঞ্চলের ১২ হাজার রোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা নিতে পারবে। একই সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি, বিএসসি ইন অকুপেশনাল থেরাপি, বিএসসি ইন স্পীচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্স করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত কাপাসিয়ায় ‘সিআরপি-রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার’ স্থাপনের লক্ষ্যে আয়োজিত পরিচিত সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, মানুষের কল্যাণে আমার বাবা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও মা মরহুমা জাহানারা জামানের নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ার ইচ্ছে ছিল। রাজশাহীতে সিআরপি‘র আঞ্চলিক পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে। এখান থেকে রাজশাহী অঞ্চলের হাজার হাজার অসহায় মানুষ সেবা নিতে পারবেন।

রাসিক মেয়র বলেন, এই পুনর্বাসন কেন্দ্র শুধু চিকিৎসা নয়, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া এই পুনর্বাসন কেন্দ্রকে করে পিছিয়ে পড়া কাটাখালি ও কাপাসিয়া এলাকা এগিয়ে যাবে।

সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে সিআরপি‘র প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়কারী ড. ভেলরী এন টেইলর বলেন, ‘সিআরপি-রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার’ হবে আঞ্চলিক পুনর্বাসন কেন্দ্র। মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এখানে পরিপূর্ণ পুনর্বাসন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এখানে কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি ও সংযোজন, অর্থোপেডিক সু টেকনোলজি, হুইলচেয়ার ও অন্যান্য সহায়ক সামগ্রী তৈরি করা হবে। এটি প্রতিষ্ঠার কারণে সাভারে সদর দফতরের ওপর চাপ কমে যাবে।

টিআরপি’র চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শহীদ কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান পরিবারের সদস্য বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেণী ও আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা বক্তব্য দেন।


অনুষ্ঠানে সিআরপি বিষয়ক উপস্থাপনা করেন সিআরপি‘র বিএইচপিআইয়ের প্রিন্সিপাল ডা. মো. ওমর আলী সরকার।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন টিআরপি‘র সদস্য মুশতাক আহমেদ, রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি রশিদুল হাসান, আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এনামুল হক, উপ-পরিচালক শাহানা আখতার জাহান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে কবিকুঞ্জ সভাপতি প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলীবঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর শামসুদ্দিন আহমেদ খোকন, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. এসএমএ মান্নান, সাবেক মহানগর কমাণ্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, কাটাখালি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, কাটাখালি পৌর সভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনোয়ার সাদাত নান্নু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, সিআরপি-রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টারে অপারেশন সেবা, প্যাথলজি ও রেডিওলজি সেবা, অভ্যন্তরীণ সেবার মধ্যে মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি পুনবার্সন কেন্দ্র, অটিজম ও সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষায়িত শিশু বিভাগ, স্ট্রোক রোগীদের জন্য পুনর্বাসন ওয়ার্ড, মেডিকেল কনসালটেন্সি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পীচ এন্ড ল্যাঙ্গুরেজ থেরাপি, শিশু বিভাগ, ক্লাব ফুট বা মুগুর পা চিকিৎসা, মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় ডে কেয়ার সেন্টার, পুনর্বাসন সেবাসমূহের মধ্যে আর্থ-সামাজিক সহায়তা, সমাজভিত্তিক পুনর্বাসন, মনো-সামাজিক কাউন্সিলিং, ক্রীড়া ও বিনোদন, সহায়ক ও পুনর্বাসন সামগ্রীর মধ্যে প্রস্থেটিক্স এবং অর্থোপেডিক্স (কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন), অর্থোপেডিক সু টেকনোলজি, সাপোর্টিভ সিটিং বিভাগ জাতীয় চিকিৎসা সেবা, হুইলচেয়ার ও অন্যান্য সহায়ক সামগ্রী পাওয়া যাবে।

এছাড়াও এখানে গড়ে তোলা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১ বছরের ইন্টার্নশিপ সহ ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি, বিএসসি ইন অকুপেশনাল থেরাপি, বিএসসি ইন স্পীচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্স করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

অবকাঠামো সুবিধার মধ্যে থাকবে মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত, অটিজম, সেরিব্রাল পালসি ও স্ট্রোক রোগীদের জন্য পুনবার্সন সেবাদান কেন্দ্র, ভর্তিকৃত রোগীদের আবাসন সুবিধা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসকদের জন্য আবাসন সুবিধা ও শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল সুবিধা।

উল্লেখ্য, সিআরপি একটি অলাভজনক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যা ট্রাষ্ট ফর দি রিহ্যাবিলিটেশন অফ দি প্যারালাইজড (টিআরপি) এর একটি বিশেষ প্রকল্প। ‘সৃষ্টির সেবাই স্রষ্টার সেবা’ এই স্লোগান নিয়ে ১৯৭৯ সালে একজন ব্রিটিশ ফিজিওথেরাপিস্ট ড. ভ্যালেরি এ টেইলর মাত্র ৪ জন রোগী নিয়ে ঢাকায় পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) প্রতিষ্ঠা করেন। এরই ধারবাহিকতায় সারাদেশে সিআরপির মোট ১১টি উপকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আর্তমানবতার সেবায় রাজশহীতে পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তুলতে কাপাসিয়ায় মূল সড়ক সংলগ্ন ১৫ বিঘা জমি সিআরপি‘কে দান করেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও তার পরিবার। ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সিআরপি প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর এর সঙ্গে চুক্তি ও জমিদান কার্যক্রম সম্পন্ন করেন রাসিক মেয়র। ওই জমিতে রাসিক মেয়র লিটনের প্রয়াত বাবা-মা নামে সিআরপি রাজশাহী-শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

 

আরপি/ এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top