রাজশাহী মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১


আইভীর জমি গাড়ি বাড়ি না থাকলেও তৈমূরের আছে ফ্ল্যাট


প্রকাশিত:
২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:৪১

আপডেট:
২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৩:৩৩

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা তাদের হলফনামায় নিজেদের আয় ব্যায় সম্পদসহ বিবরণী তুলে ধরেছেন। হলফনামায় প্রার্থীদের দেওয়া তথ্যবিবরণীতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর ব্যাংক জমা বেড়ে কমেছে সম্পদের পরিমান। আইভীর নিজের নেই বাড়ি গাড়ি বা জমি।

অপরদিকে হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা চলমান এবং তার বার্ষিক আয় ৮ লাখ টাকার উপরে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রিধারী। পেশায় তিনি চিকিৎসক। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা নেই। অতীতেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হয়নি বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। মেয়র হিসাবে সম্মানী ছাড়া তার আর কোনো আয়ের উৎস নেই।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে তিনি বছরে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা সম্মানী পেয়ে থাকেন। দীর্ঘদিন মেয়র হিসাবে দায়িত্বে থাকা এ প্রার্থীর হাতে নগদ টাকা রয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৪০১ টাকা। আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা আছে ২৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা। আছে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণ ও অলংকার। তার কোনো দায়দেনা বা ব্যাংক লোন নেই। নিজের নামে গাড়ি, বাড়ি ও জমি নেই। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর নির্ভরশীলদের আয়, সম্পদ ও দায় নেই বলেও উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।

২০১১ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে থাকা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সম্পদ গত নির্বাচনের চেয়ে এবার আরও কমেছে। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হলফনামায় তার হাতে নগদ টাকা ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবার নগদ টাকার পরিমাণ এক লাখ ৬৬ হাজার ৪০১ টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকে জমা ছিল ১০ লাখ টাকা। স্বর্ণ ও অন্য অলংকার ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ২ লাখ টাকার। আসবাবপত্র ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকার। যৌথ মালিকানার ১২ শতাংশ অকৃষিজমির ৮ ভাগের ১ ভাগের মালিকও ছিলেন তিনি।

তবে এবারের হলফনামায় ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং কৃষি ও অকৃষিজমির স্থলে ‘প্রযোজ্য নয়’ উল্লেখ করেছেন। ২০১৬ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ২১ হাজার ৪৭১ টাকা। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহবায়ক স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার পেশায় আইনজীবী। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে ১০টি। অতীতে মামলা ছিল ২০টি।

হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে তা রাজনৈতিক কারণে দায়ের করা হয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেননি। বর্তমানে এ মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, তার মধ্যে পাঁচটিই বিচারাধীন, তিনটি উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত ও দুটি চার্জ শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। এসব মামলা ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা, রূপগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের হয়েছে। প্রায় সব মামলায় তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, হাঙ্গা-দাঙ্গামা করা, বেআইনি সমাবেশে অংশ নেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। অতীতে তার বিরুদ্ধে ২০টি মামলা দায়ের হয়।

১৯৯৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ওইসব মামলা হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে অন্তত সাতটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে দায়ের করা হয়। অতীতের ২০টি মামলার মধ্যে দুটি হাইকোর্টে বিচারাধীন ও সাতটি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রত্যাহার করা হয়। অবশিষ্ট মামলাগুলোর চারটি উচ্চ আদালতে স্থগিত ও বাকিগুলোতে অব্যাহতি পেয়েছেন।

তৈমূর আলম খন্দকারের বার্ষিক আয় ৮ লাখ টাকার বেশি। বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে ভাড়া পেয়ে থাকেন ৫ লাখ ৭৪ হাজার ১৪১ টাকা, শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ ব্যাংক আমানত থেকে আয় ২ হাজার ৫০০ টাকা ও আইন পেশা থেকে পান ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

তার নগদ টাকার পরিমাণ ৫ লাখ টাকা ও স্ত্রীর আছে দুই লাখ টাকা। তার ৫ ভরি স্বর্ণ ও স্ত্রীর ১২ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। এই পাঁচ ভরি স্বর্ণের পুরোটাই উপহার পেয়েছেন। এছাড়া আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার ইত্যাদি রয়েছে।

এছাড়া রাজউক থেকে পাওয়া ৫ কাঠার প্লট ও ২৭৬ বর্গমিটার আয়তনের নির্মাণাধীন বাড়ি রয়েছে তার। যৌথ মালিকানায় থাকা ২০০ শতাংশ কৃষিজমি ও ৩০ শতাংশ অকৃষিজমির ২২ শতাংশ মালিকানাও আছে তার। এ প্রার্থীর কোনো ব্যাংক লোন ও দায়দেনা নেই।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন তৈমুর আলম খন্দকার। ওই নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় বিসিকে একটি প্লট এবং স্ত্রীর নামে রাজধানীর সেগুনাবাগিচায় দুটি ফ্ল্যাট ও তোপখানার মেহরাব প্লাজায় একটি স্যুট ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন।

বিসিকের ওই প্লটটির দাম এক লাখ ২৪ হাজার টাকা ও স্ত্রীর দুটি ফ্ল্যাট ও একটি স্যুটের দাম ৩৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা উল্লেখ করেছিলেন। এবারের হলফনামায় ওইসব সম্পদ উল্লেখ করেননি তিনি। তবে স্ত্রীর নামে ৩১৪ বর্গমিটার আয়তনের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সাবেক সভাপতি মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি দাওরা/মাস্টার্স পাশ। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা নেই ও অতীতেও ছিল না। তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও নগদ টাকা ১৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। তার ১০ ভরি স্বর্ণ ও এক লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের আসবাবপত্র রয়েছে। তার কোনো ব্যাংক ঋণ বা দায়দেনা নেই।

খেলাফত মজলিশের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি এবিএম সিরাজুল মামুনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও সোনারগাঁ থানায় ২০১৩ ও ২০১৪ সালের চারটি মামলা রয়েছে। সবকটি মামলাই রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর জন্য রয়েছে। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাশ। অতীতে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। তার বার্ষিক আয় চার লাখ টাকা। নগদ টাকার পরিমাণ ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও ৮০ হাজার টাকা মূল্যমানের আসবাবপত্র রয়েছে। তার নামে যৌথ মালিকানায় তিনতলা ভবন রয়েছে। ওই ভবনের এক-চতুর্থাংশের মালিক তিনি। তার স্ত্রীর নামে ৫২ তোলা স্বর্ণ রয়েছে। তার কোনো ব্যাংক ঋণ বা দায়দেনা নেই।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিন বিএসসি ডিগ্রিধারী। পেশায় ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা নেই ও অতীতেও ছিল না। বছরে তার ব্যবসা থেকে দুই লাখ ৯৫ হাজার টাকা আয় হয়। সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ৫.২৫ শতাংশ অকৃষি জমি, একটি নির্মাণাধীন বাড়ি ও স্ত্রীর নামে ১০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। তার কোনো ব্যাংক ঋণ বা দায়দেনা নেই।

বাংলাদেশ কল্যান পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহসচিব মো. রাশেদ ফেরদৌস চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাশ। পেশা চাকরি ও ব্যবসা। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ২৩ হাজার ৮৮৬ টাকা ও চাকরি থেকে আয় ৮ লাখ ৬ হাজার ৭০০ টাকা। তার স্ত্রীর আয় বছরে তিন লাখ টাকা। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা নেই ও অতীতেও ছিল না। তার নগদ টাকার পরিমাণ ৫ লাখ ৮ হাজার টাকা ও ব্যাংকে আছে ৪২ হাজার টাকা। তার নামে ৬ দশমিক ১২ শতক কৃষি ও ১ দশমিক ৩৩ শতক অকৃষিজমি আছে। স্ত্রীর নামে একটি ১০৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। এ প্রার্থীর ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ১৫ হাজার টাকা ও তার স্ত্রীর ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৪৯ টাকা।

প্রসঙ্গত তফসিল অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্ধ ২৮ ডিসেম্বর এবং ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।

 

 

 

আরপি/এসআর-১০



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top