রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর নির্বাচনে কার হাতে যাচ্ছে নৌকার টিকিট?


প্রকাশিত:
৬ অক্টোবর ২০২১ ০০:৫৭

আপডেট:
৬ অক্টোবর ২০২১ ০০:৫৯

বাম থেকে আব্দুল হাকিম, মো. মোখলেসুর রহমান ও সামিউল হক লিটন

আসছে ২ নভেম্বর মঙ্গলবার ৭ম ধাপে সারা দেশে কয়েকটি পৌরসভায় অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। সেই তালিকায় আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা। আর তাই তফসিল ঘোষণার পরপরই এই পৌরসভায় নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে।

ঘর থেকে চায়ের স্টল পর্যন্ত চলছে নির্বাচন নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মত বিনিময়। আর সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ।

আওয়ামীলীগের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অনেকেই আশাবাদি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার।

তবে পৌরবাসী মনে করছেন কথায় না, এই পৌরসভার কাংখিত উন্নয়নে যিনি সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রেখেছেন তাকেই মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করা হবে।

জানা গেছে, বিগত পৌরসভা নির্বাচনে সরকারি দল সমর্থিত মেয়র জয় লাভ না করায় কাংখিত উন্নয়ন হয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায়।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে পৌর মেয়রের এই চেয়ারটি ছিলো কখনো বিএনপি আবার কখনো জামায়াতের দখলে। এর মধ্যে ১৫ বছরই জামায়াতের মেয়র এই পৌরসভায় করেছেন রাজত্ব্য।

কিন্তু কামের কাম কিছুই হয়নি। এছাড়া বর্তমান পৌর পরিষদের ২০ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের মধ্যে বিএনপি সমর্থিত রয়েছেন ১০ জন, আওয়ামীলীগ সমর্থিত রয়েছেন ৮ জন এবং ২ জন রয়েছেন জামায়াত সমর্থিত।

ফলে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি, উল্টো বেড়েই চলেছে জনদূর্ভোগ। কারণ হিসেবে সরকারের সাথে বর্তমান পৌর মেয়রের সমন্বয়হীনতাকে চিহ্নিত করেছেন অনেকে।

এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন ২০ বছর ধরে স্রোতের বিপীতে মেয়রদের অবস্থানে পৌরসভার উন্নয়ন কচ্ছপ গতিতে এগুচ্ছে।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় নির্বাচন কমিশন গত ২৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করেছেন।

কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন টাঙিয়ে অবস্থান জানান দিচ্ছেন।

এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তাদের কার্যক্রম থেমে নেই।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি রয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মোখলেসুর রহমান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জেলা যুবলীগের সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সামিউল হক লিটন এবং জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও জেলা পরিষদ সদস্য মো. আব্দুল হাকিম।

তারা দলের মনোনয়নের ব্যাপারে ব্যাপক গণসংযোগসহ উঠান বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত দল কার হাতে এই পৌরসভায় লড়াইয়ের জন্য নৌকার টিকিট তুলে দেবেন তা সময়ই বলে দিবে।

এদিকে নেতাকর্মীরা বলছেন, নেত্রী যাকেই দলীয় মনোনয়ন দেননা কেন নির্বাচনের ময়দানে আমরা তার জন্যই কাজ করবো। কেননা সরকার দলীয় মেয়র না থাকায় এ পৌরসভার কাংখিত উন্নয়ন হয়নি।

এছাড়া যিনি দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করবেন, মানুষকে সময় দিবেন তাকেই গ্রহণ করবে পৌর নাগরিক।

যিনি হবেন সদালাপি, যিনি হবেন নিরহংকার ব্যক্তি তিনিই হবেন পৌরসভার অভিভাবক। বিগত সময়ের সকল ধরনের ভুল থেকে আত্মশুদ্ধি করে এবার একাট্টা হয়ে দলের জন্য কাজ করতে হবে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুখলেসুর রহমান বলেন, বিগত বছরগুলোতে এই পৌরসভায় কখনো বিএনপি আবার কখনো জামায়াতের লোকেরা মেয়র পদে আসীন ছিলো। কিন্তু তারা পৌর এলাকার কয়েকটি স্থানে ড্রেণ নির্মান ছাড়া আর কোন কাজ করতে পারেনি।

জনসংখ্যার সাথে সাথে পৌর এরাকায় যানবাহন বৃদ্ধি পেলেও প্রশন্ত হয়নি রাস্তাঘাট। শহরের পুরাতন জেলখানা হয়ে দাউদপুর রোডে অবস্থিত জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা প্রশস্তকরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও আজো আলোর মুখ দেখেনি সে প্রকল্প।

এছাড়া ঝিলিম রোড হয়ে বড় ইন্দারা মোড় পর্যন্ত রাস্তাটিও প্রশস্তকরনের কাজ বন্ধ রয়েছে। আর তাই উন্নয়নের জন্য অবশ্যই সরকার সমর্থিত দলের জনপ্রতিনিধি দরকার।

নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা যুবলীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সামিউল হক লিটন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় সরকারি দলের মেয়র না থাকায় কাংক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী। কেননা এলাকার উন্নয়ন করতে সরকারি অর্থের প্রয়োজন হয়।

জনপ্রতিনিধি যদি সরকারি দলের হয় তাহলে তিনি সরকারের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় অর্থ যত তাড়াতাড়ি বরাদ্দ আনতে পারবেন অন্য দলের হলে তা আনতে সময় ব্যয় হয়ে যাবে কিন্তু কাংক্ষিত সফলতা আসবেনা।

যিনি এ পৌরসভার প্রতিটি রাস্তা প্রশস্তকরণ, বাজার সম্প্রসারণ, প্রধান প্রধান সড়কে সৌন্দর্যমন্ডিত বিভিন্ন স্থাপনাসহ নাগরিক সুবিধা দিতে পারবেন তাকেই মেয়র নির্বাচিত করা উচিত।

এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল হাকিম বলেন, সরকারের বিরোধিতা করে এলাকার উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি দলের মেয়র হলে এ পৌরসভার আরো উন্নয়ন ঘটবে।

আওয়ামী লীগের ৩ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে তার ব্যক্তিগত ভোট রয়েছে অনেক। আর তাই তাকে মনোনয়ন দিলে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থীকে পরাজিত করে দলের জন্য সফলতা আনতে পারবেন তিনি।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ রোকনজ্জামান রোকন বলেন, আমাদের ৩ জন প্রার্থী গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকের পাশাপাশি কেন্দ্রে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে বঙ্গবন্ধু কণ্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিবেন।

আমার ধারণা ১৫টি ওয়ার্ডের ভোটারদের যিনি আকৃষ্ট করতে পেরেছেন, দূর্যোগকালীন সময়ে যিনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ, দলীয় নেতাকর্মীদের যিনি ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন নেত্রী তাকেই মনোনয়ন দিবেন।

উল্লেখ্য সর্বশেষ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে জামায়াত সমর্থীত প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জয় লাভ করলেও পৌরসভার উন্নয়নে তেমন একটা ভূমিকা রাখতে পারেনি।

সেক্ষেত্রে সরকারি দল আওয়ামী লীগের মেয়র নির্বাচিত হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন এলাকার সুশিল সমাজ।

 

আরপি/ এমএএইচ-০৯



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top