রাজশাহী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


বৃটিশ হাউস অফ কমন্সে পুরস্কৃত হলেন লুৎফল হক


প্রকাশিত:
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:২২

আপডেট:
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:২৬

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

'মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য'-এই কথাটিকে তিনি সারাটা জীবন মন্ত্রগুপ্তির মত মেনে চলেন। শৈশব, কৈশোর কেটেছে নিদারুণ কষ্টে। পেটের জ্বালাতে তিনি ডাস্টবিন থেকে খাবার কুড়িয়ে খেয়েছেন। দারিদ্রতার করাল গ্রাস তার শৈশব, কৈশোরকে গিলে খেয়েছে। অভাবের তাড়নায় প্রাথমিকের গণ্ডিটুকু তিনি পেরোতে পারেননি। হতদরিদ্র এক পরিবারে তাঁর জন্ম। মা-বাবা দুজনেই বিড়ি শ্রমিক।

কৈশোরে তিনি বাড়িতে বাবা-মার প্রস্তুত করা বিড়ি নিয়ে ১০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে কারখানায় দিয়ে আসতেন। জীবনের বহু বছর তার কেটেছে অনাহারে, অর্ধাহারে। সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য তিনি কাজ করেছেন রাজমিস্ত্রির জোগালি, বইয়ের দোকানে, পাথরের খাদানে। তিনি বরাবরই পরিশ্রমী। ছিলেন স্বপ্নবাজও। স্বপ্ন দেখতেন জীবনে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। স্বাচ্ছন্দ্যের স্বপ্ন দেখতেন নিত্যদিন।

তিনি আর কেউ নন। দারিদ্র্য জয় করা বিশ্ব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মানবতার ফেরিওয়ালা সফল ব্যবসায়ী লুৎফল হক। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানার সীমান্তবর্তী অদ্বৈত নগর গ্রামে তার জন্ম। সেখানেই তাঁর বেড়ে উঠা। বাণিজ্য জগতে হাতেখড়ি সেখান থেকেই। প্রথমে বইয়ের দোকান, পরবর্তীতে পাথরের ক্রাশার, তারপরে পাথরের খাদান।আগামীতে ফুড প্রসেসিং, হাসপাতাল,ওটিটি প্লাটফর্ম,রিয়েল এস্টেট ব্যবসাতেও তিনি বিনিয়োগ করবেন। বহুমুখী বাণিজ্যিক ভাবনার মানুষ তিনি। একেবারে শূন্য থেকে সাফল্যের উচ্চ শিখরে উঠে আসা এক মানুষ। তিনি আর পাঁচজনের চেয়ে আলাদা অন্য এক জায়গায়।বেশিরভাগ মানুষই জীবনে আর্থিক সাফল্য এলে শেকড়ের কথা ভুলে যান। লুৎফল হক সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী একজন মানুষ। সাফল্যে তাঁর মাথাও ঘোরেনি, তিনি শেকড়ও ভোলেননি। তিনি আজও নিয়ম করে প্রতিদিন তাঁর অতীতের কথা উচ্চারণ করেন। নিদারুণ দুঃখ-কষ্ট,যন্ত্রণার কথাগুলো স্বজনদের কাছে খুলে বলেন।

তিনি স্পষ্টবাক মানুষ। সহজ, সরল,বিশাল হৃদয়ের এক মানুষ। ভীষণ মানবিক ও দরাজ দিলের। বছরভর তিনি গরীব,দুঃস্থ,অসহায়, এতিমদের পাশে দাঁড়ান। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন ৩০০ মানুষকে বিনামূল্যে দুপুরের খাবার দিচ্ছেন। বছর দুয়েক পূর্বে ঝাড়খণ্ডের প্রায় চল্লিশটি গ্রামের মানুষকে সুখা মরসুমে প্রতিটি বাড়িতে ২৫ কেজি চালের বস্তা দিয়েছেন। সাথে আলু, ডাল, পেঁয়াজও। করোনা মহামারীতে পুলিশসহ বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে তিনি অক্সিজেন সিলিন্ডার,খাবার সরবরাহ করেছেন। ঝাড়খন্ড -বাংলা সীমান্তবতী এলাকাগুলোতে হাজার হাজার গরীব, দুস্থ, অসহায় মানুষকে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ করেছেন। অনেক ইমাম,মুয়াজ্জিন,পুরোহিত ও ফাদারদের সংবর্ধিত করেছেন।বহু মন্দির,মসজিদ, গির্জা,ইয়াতিমখানাসহ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে অকাতরে দান করেন তিনি।

এসব জনকল্যাণমূলক কাজকর্মের জন্য তিনি দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার ও সংবর্ধনা পেয়েছেন। লুৎফল হকের এইসব মানবিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটি তাঁকে আজীবন সদস্য পদ দিয়েছেন। বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরের হাত থেকে পেয়েছেন বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড। লুৎফল বাবুর মানবিক কাজের স্বীকৃতি দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তাঁকে দেওয়া হয়েছে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি।

তিনি পেয়েছেন এশিয়া আইকনিক অ্যাওয়ার্ডও। মালয়েশিয়ার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ডঃ মজলি মালিক তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত লুৎফল হককে তুলে দিয়েছেন গ্লোবাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড। আরেক বলিউড অভিনেত্রী সোনালি বেন্দ্রে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড। সার্ক জার্নালিস্ট ফোরাম আগ্রাতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে লুৎফল হককে পুরস্কৃত করে। সমাজ সেবায় অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী এস পি সিং বাঘেল তাঁর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অফ কমন্সে সমাজসেবায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য খোদ ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী রুথ কাডবেরি মানবতার ফেরিওয়ালা লুৎফল হককে 'বেস্ট ফিলানথ্রোপিক অফ দা ইয়ার-২০২৩' সম্মানে ভূষিত করেন।ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ঐ কক্ষে লুৎফল বাবুর মানবিক কর্মযজ্ঞের গল্প উপস্থাপকের মুখে দীর্ঘক্ষণ উচ্চারিত হয়। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বহু বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের সাংসদ লর্ড রিচার্ড হ্যারিংটন, সাংসদ বোর্নস বার্মা, সাংসদ সীমা মালহোত্রা,সাংসদ ভেলারি ওয়াজ, সাংসদ বীরেন্দ্র শর্মা,সাংসদ শৈলেশ ভারা প্রমুখ।

ব্রিটিশ মন্ত্রী রুথ ক্যাডবেরি লুৎফল হকের কাজের প্রশংসা করে বলেন,তার জীবনের গল্প সিনেমাকেও হার মানাবে।তিনি বলেন, মাদার টেরিজার দেশে আগামীতে আরো এক মহৎ হৃদয়ের মানুষের দেখা মিলবে।

হাউস অফ কমন্সে পুরস্কার পেয়ে কেঁদে ফেলেন লুৎফল হক। তিনি বলেন, গরীব দুঃখীর সেবা করেই আজ আমার এই মহার্ঘ্য সম্মাননা প্রাপ্তি । আমার সমাজ সেবামূলক কাজকর্ম আগামীতে আরও বৃহত্তর পরিসরে হবে। লুৎফল হক বলেন, জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ হচ্ছে, গরীব-দুঃখী,অসহায়-আর্ত মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। যতদিন বাঁচে থাকবো,ততদিন আমি গরিব,অসহায় মানুষের সেবা করে যাব।

 

 

আরপি/এসআর-০৯


বিষয়: বৃটেন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top