রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


মোহনপুরে করোনা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ট্রাকের ড্রাইভার-হেলপাররা


প্রকাশিত:
১৫ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৩৬

আপডেট:
১৫ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৪৫

 

দেশে ক্রমশই বাড়ছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা। দিনদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন জেলা। ইতোমধ্যেই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ জেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চলতি মাসে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা রাজশাহীর পুঠিয়ায় ২ জন ও বাগমারাতে ১ জন করোনা আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন। এতে করে করোনা আক্রান্ত জেলার তালিকায় উঠে এসেছে রাজশাহীর নাম। ফলে এখন ঝুঁকিপূর্ণ রাজশাহীর জনপদ।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় এই ঝুঁকিটা আরও বাড়িয়ে তুলছেন এখানকার মাছ ও পণ্য বহনকারী ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপাররা। তারা নিজেরা যেমন করোনা আক্রান্ত হতে পারেন, তেমনি অন্যদেরকেও সংক্রমিত করতে পারেন।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার এসকল ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপাররা পণ্য খালাস করার পর ফাঁকা ট্রাকে ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ আক্রান্ত এলাকা থেকে যাত্রী বহন করে নিয়ে আসছেন উপজেলায়। ফলে তারা নিজেরা যেমন আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন, তেমিন আক্রান্ত করতে পারেন পুরো উপজেলা তথা জেলার জনপদকে। এসকল ট্রাক ড্রাইভার-হেলপারদের থেকে করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাদের প্রতিবেশি ও স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কেশরহাটে বেশ কয়েকটি মাছের আড়ত রয়েছে। যদিও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন আড়তগুলি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মাছ চাষিরা মাছ ধরে পুকুরের কাছেই অস্থায়ী আড়ত বসিয়েছেন। প্রতিদিন ৩-৪ ট্রাক মাছ নিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করছেন তারা।

যে ড্রাইভাররা মাছের ট্রাক নিয়ে যান তাদের অনেকের বাড়ি কেশরহাট পৌরসভার সাকোয়া গ্রামে। খোঁজ নিয়ে অনেকের নামই জানা গেছে, যারা প্রায় নিয়মিত বাইরে যাতায়াত করছেন। জেলার বাইরে যাতায়াতকারী ড্রাইভাররা হলেন- মৃত মনসুরের ছেলে ইলিয়াস (৪৫), ফজলুর ছেলে তাজলু (৩৫), মুসলেমের ছেলে রাকিব (২৫), আত্তাবের ছেলে সাদ্দাম (২৫) ও শাকিল (২১), মুক্তার আলীর ছেলে মাসুম (২০), হাকিমের ছেলে বেলাল (১৮), মোজাম্মেলের ছেলে নিজাম (৩০) প্রমূখ।

ড্রাইভারদের সাথে যাতায়াতকারী হেলপাররা হলেন একই এলাকার মুনতাজের ছেলে মুজাহিদ (২০), অঙ্গাতের ছেলে জিল্লুর (২০), সামসুদ্দিনের ছেলে মোস্তাক (২৫), শরাফতের ছেলে কালাম (৪৫), মফির ছেলে ধলা (৩৫), জালালের ছেলে জলিল (১৮), সুবলের ছেলে এজাজুল (৪০), সিরাজের ছেলে বারিক (২৫) ও মিনহাজ (২০), ফিরোজ (৩০), নজুম (৩৫), দুলাল (৪০) প্রমূখ।

এদের মত উপজেলায় আরও অসংখ্য ড্রাইভার-হেলপার রয়েছেন, যারা প্রতিদিন ঢাকা-নারায়নগঞ্জ যাতায়াত করছেন এবং এলাকাতে এসে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের সঠিক তথ্য নেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।

জানা গেছে, প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন ড্রাইভার ও হেলপার ঢাকায় মাছ নিয়ে যাওয়া আসা করছেন। মাছ ও পণ্য খালাস শেষে ড্রাইভাররা অভিনব কায়দায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজশাহীতে গলাকাটা ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে ফিরছেন।

এলাকার জনগন, স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশ বারবার সতর্ক করলেও হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না তারা। এসকল ব্যক্তিরা অবাধে ঘোরাফেরা করছেন পাড়া-মহল্লার দোকানপাট ও বাজারে। এতে উপজেলাবাসী করোনা সংক্রমণের ভয় ও আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

এ পর্যন্ত কতজন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও বিভিন্ন জেলা থেকে উপজেলায় ফিরেছেন তার সঠিক তথ্যও জানা নেই স্থানীয় প্রশাসনের। এসকল স্থান থেকে ফিরে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন অনেকেই। অনেকেই প্রশাসনের ভয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

এ অবস্থায় বহিরাগতদের আগমন ঠেকাতে দ্রুততম সময়ে ট্রাক ড্রাইভার-হেলপারদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন উপজেলার সচেতন নাগরিকরা।

তাঁরা বলছেন, পণ্য, মাছ ও কাঁচামাল বহনকারী যানবাহন লকডাউনের আওতামুক্ত থাকায় এগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ অবাধে যাতায়াত করছে। ফলে বর্তমান সময়ে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বহিরাগতদের কারণে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি দিনদিন বাড়ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে এখনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

এদিকে বহিরাগতদের আসার খবর পেয়ে বাড়িতে গিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিচ্ছেন মোহনপুর থানা পুলিশ। জিজ্ঞেস করায় এমনটাই জানিয়েছেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ।

এদিকে, করোনা সংক্রমণরোধ ও সচেতনতা বাড়াতে মোহনপুর উপজেলো স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবির বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। করোনা ভাইরাস কোনো লক্ষণ-উপসর্গ ছাড়াই দু-সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যেকোনো ব্যক্তির দেহে থাকতে পারে।

করোনা ভাইরাস বহনকারী ব্যক্তি যদি কোনো কারণে হাঁচি বা কাশি দেন, তাহলে তার আশপাশের বাতাসে ৩ থেকে ৬ ফুট দূরত্বের মধ্যে করোনা ভাইরাসবাহী জলীয় কণা (ড্রপলেট) বাতাসে ভাসতে শুরু করে। ওই পরিধির মধ্যে থাকা যেকোনো ব্যক্তির দেহে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাসটি প্রবেশ করতে পারে। এ কারণে জনসমাগম বা বেশি ভি— এমন এলাকা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। যাতে বাতাসে ভাসমান সম্ভাব্য করোনাভাইরাস কণা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ না করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, নাক, মুখ ও চোখ হাত দিয়ে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, করোনাভাইরাস কেবলমাত্র নাক, মুখ ও চোখের উন্মুক্ত শ্লেষ্মা-ঝিল্লি দিয়ে দেহে প্রবেশ করতে পারে। হাত দিয়ে স্পর্শ করা কিংবা বহুল ব্যবহৃত আসবাব নিয়মিতভাবে জীবাণু নিরোধক স্প্রে বা দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। বাইরে থেকে এসে, খাওয়ার আগে ও প্রয়োজন সাপেক্ষে নিয়মিতভাবে ও কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ভালো করে হাত ধুতে হবে।

পরিচিত কারও করোনা ভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা জরুরি ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। যাতে করে তাকে দ্রুত পরীক্ষা করা যায় এবং প্রয়োজনে সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টাইন) করে রাখা যায়।

এ ব্যাপারে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানওয়ার হোসেন বলেন, আমরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও অন্য জেলা থেকে আসা ব্যক্তিদের ঘরে অবস্থান করতে বলছি। যদি কেউ কোয়ারেন্টাইনে না থেকে বাহিরে বের হয় তাহলে তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ১০১২ জনে ঠেকেছে। আর মারা গেছেন ৪৬ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪২ জন।

 

আরপি/ এএন



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top