ত্রাণ তহবিলে বেতনের ৭৪ হাজার টাকা দিলেন রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ
করোনা সংক্রমণরোধে অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজশাহী লকডাউনের পর থেকেই অসহায় মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল রাজশাহী কলেজ। কলেজ শিক্ষক পরিষদ ও প্রশাসনের উদ্যোগে স্যানিটাইজার উৎপাদন ও বিতরণ, সিটি কর্পোরেশনের ত্রাণ তহবিলে ৪ হাজার কেজি চাল প্রদান, হরিজন পল্লি ও অন্যান্য অসহায়দের মাঝে ২ হাজার কেজি চাল ছাড়াও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ নানারকম সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে দেশসেরা কলেজটি।
এসকল মহৎ কাজের উদ্যোক্তা কলেজের ডাইনামিক অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান। এবার নিজের মহানুভবতাকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেলেন তিনি। মেয়রের ত্রাণ তহবিলে দান করলেন নিজের এক মাসের বেতন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের আহবানে সাড়া দিয়ে ত্রাণ তহবিলে এক মাসের বেতনের ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা দিয়েছেন অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান। বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরভবনে মেয়রের নিকট চেক হস্তান্তর করেন তিনি। এ সময় মেয়র অধ্যক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে । সরকারের একার পক্ষে এই জনগোষ্ঠীকে সামলানো মুশকিল।
পৃথিবীতে জঘন্যতম খারাপ জিনিস ক্ষুধা। মানুষ সবকিছু সহ্য করতে পারলেও ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না। ক্ষুধার জন্য মানুষ সবকিছু করতে পারে। ফলে আগামীতে যেকোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের উচিত যাদের ২ বা ৬ মাসের খাবার মুজদ আছে, আমরা কেন ১ মাস বা দুই মাসের খাবার অন্যকে দিব না।
আমি যে টাকা দিলাম, এই টাকাটা আমার আগামী ২ মাস বা ৫ মাস না হলেও চলবে। যার চলে না, খেতে পারে না তাদেরকে দেয়া উচিত।
আজকে দেখলাম কর্পোরেশনের সামনে ত্রাণের ৩-৪ কেজি চালের জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ মহিলা বসে আছেন। আর আমরা এখন ঘরে খাবার মজুদ করছি। সামনে রোজার জন্য অনেকেই খাবার মজুদ করছি। এটি না করে স্বচ্ছলদের সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষাবিদ।
তিনি আরও বলেন, আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমি এখন অনেক বেতন পাচ্ছি। আমাকে যদি আল্লাহ এটা না দিতেন তবুও আমাকে চলতে হতো। তাহলে আমি এক মাসের দিয়ে দিলে আমার কিছুই হবে না। আমাকে আল্লাহ চালিয়ে নেবেন। এই ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে আমার উছিলায় যদি ৫০টি ঘর আগামী ১৫ দিন বা ১ মাস চলে তাহলে এ সমস্যা আমরা মোকাবেলা করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, আমার মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাহায্য বা আমাদের চেয়ে যারা বেশি স্বচ্ছল এবং আরও খোলসা করে বলতে চাই রাজশাহীতে যদি ২০০ জন কোটিপতি থাকেন এবং তারা যদি এভাবে সাহায্য করে তাহলে তা মানুষের জন্য অত্যন্ত মঙ্গলকর হবে। তাহলে রাস্তায় রাস্তায় ত্রাণ বিতরণ করতে হবে না। তাদেরকে টাকা দিয়ে দেয়া যাবে। তারাই বাজার করে খেতে পারবে। কারও কাছে হাত পাততে হবে না।
নিজের দান সম্পর্কে বলেন, আমি আমার মর্মবেদনা, নৈতিক দায়িত্ব থেকেই এই টাকা দিয়েছি। এটি কিন্তু সাহায্য না, এটা তাদের অধিকার। আমার টাকার উপর তাদের হক রয়েছে। পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবেই হোক তাদের অর্থ দিয়েই আমি লেখাপড়া শিখে মানুষ হয়েছি। করোনা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে মানবতার।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, সিটি করপোরেশনের গঠিত ত্রাণ তহবিলে বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী, পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন, ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বস্তরের সম্মানিত নাগরিকবৃন্দের অনুদান যেমন- নগদ অর্থ, চাল, ডাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ, সাবানসহ নিত্য প্রয়োজনী পণ্য গ্রহণ করা হচ্ছে।
যে কেউ প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নগর ভবনে সরাসরি আমার কাছে অথবা নির্ধারিত বুথে সহায়তার অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী প্রদান করতে পারবেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগের পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বিত উদ্যোগ বেশি ফলপ্রসূ ও কার্যকর হয়। এই উদ্যোগে আপনাদের সকলকে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
মেয়রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বুধবার (১৫ এপ্রিল) উপশহর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা মোসা. কানিজ ফাতেমা তার মূল বেতনের পুরো টাকা রাসিকের ত্রাণ তহবিলে দান করেন।
আরপি/ এএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: