দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কি ভাবছে তরুণরা ?
![](https://rajshahipost.com/uploads/shares/নির্বচন_কমিশন-2023-12-28-17-22-06.png)
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে নতুন ভোটাররা। একটি দেশকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী করে তোলার পিছনে মূল কারিগর হলো সেই দেশের তরুণ প্রজন্ম ও সেই দেশের যুবকেরা। পৃথিবীতে যত বড় বড় বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে সেগুলোর পিছনে মূল কারিগর ছিল যুবক। ১৯৭১ সালের মুক্তযুদ্ধে তরুণদের ভূমিকা অতুলনীয় ।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হিসাব বলছে, বর্তমানে ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৮৫২ জন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে ইসি। এ তালিকা অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের ভোট নেওয়া হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। সে হিসেবে পাঁচ বছরে দেশে ভোটার বেড়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৬ জন। নতুন ভোটারদের মধ্যে কতভাগ তরুণ ভোটার সাত জানুয়ারি ভোট দিতে যাবেন সেটি এখন সময়ের দাবি।
সবার অংশগ্রহণের নির্বাচনের প্রশ্নে। বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) পরিচালিত একটি জরিপে অংশ নেয়া ৭২ শতাংশ তরুণ ভোট দিতে ইচ্ছুক বলে মত দিয়েছে।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রতিষ্ঠান আইআরই একটি জরিপ পরিচালিত করে, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ছিল তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর। আইআরআই পরিচালিত ওই জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে যারা ভোট দিতে আগ্রহী নন, তারা কোন ভোট দেবেন না, এ প্রশ্নে ৫৫ শতাংশের উত্তর ছিল অতীতে তাদের ভোট অন্য কেউ দিয়েছে।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমবার ভোটার হয়েছি। একধরনের উচ্ছ্বাস তো কাজ করছেই। যিনি উন্নয়ন করতে পারবেন বলে মনে করছি, তাঁকে ভোট দেব।’
সমাজে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দেখে নিজেরাই চুপ হয়ে যাচ্ছেন বলেই মনে করেন শিক্ষার্থী জিসান। তিনি বলেন, কে কী বলবে সেটা ভেবে ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই এখন প্রকাশ্যে মতামত দিতেও সংকোচ বোধ করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হুযাইফা মোস্তফা বলেন , “ভোটের পরিবেশ এখনো ভালো মনে হচ্ছে। ভোটের দিন পরিবেশ এ রকম থাকলে আমি, আমার বন্ধুরা অবশ্যই ভোট দিতে যাব। " নতুন ভোটার মেহেরাব সিফাত বলেন, “বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ রাজনৈতিকভাবে উদাসীন। এটা তৈরি হওয়ার কারণ হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কোনো তরুণ নেতাদেরকে উঠে আসতে দেখি না যে তারা আসলে পরিশ্রম করে আকাঙ্ক্ষা থেকে রাজনৈতিকভাবে ভালো করেছেন এবং সেখান থেকে একটা পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে”।
ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ভিত্তি গড়ে তুলেছেন ছাত্র-তরুণেরাই। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরপরই কলকাতা থেকে আসা ছাত্র নেতৃত্ব ও ঢাকার ছাত্র নেতৃত্ব মিলে গড়ে তোলেন গণতান্ত্রিক যুবলীগ। বলা চলে, এ ভূমির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গোড়াপত্তন। এরপর ১৯৫২ থেকে শুরু করে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সব কটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে পথ দেখিয়েছেন তরুণেরা। এমনকি ২০০৮ সালের আগস্টে জরুরি অবস্থা অবসানের আন্দোলনে (এতে রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছিল) নেতৃত্ব দেন ছাত্র-তরুণেরা।
এই তরুণরা সত্তর বা আশির দশকের সময়ের মতো তরুণ নয়। তারা আরও অগ্রসর। তারা শারীরিকভাবে দেশে থাকলেও মানসিকভাবে একটি বৈশ্বিক সমাজের বাসিন্দা। গণতান্ত্রিক বিশ্বের নাগরিকদের সঙ্গে তাদের কার্যকর যোগাযোগ আছে। তারা জানে, একটি রাষ্ট্রকে কেমন হতে হয়, দেশ কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, ন্যায়বিচার কী, মানবাধিকার কী, সাম্য কী, মতপ্রকাশের অধিকার কী, নাগরিকদের নিরাপত্তা কোথা থেকে আসে। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠা করতে সংগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও তারা জানে, রাস্তায় নেমে দাবি জানাতেও জানে।
নতুন প্রজন্মগুলো যদি রাজনৈতিক মনোভাব নিয়ে গেড়ে ওঠে, নিজেদের ভেতর থেকে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দলগুলোর মধ্যে যথার্থ স্থান করে নিতে পারে, নিজেদের রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে পারে তাহলে এখনকার রাজনীতি পরিবর্তিত হবে। ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে বিদ্যমান দলগুলো যেতে বাধ্য হবে।
আরপি/ আইএইচ-৬
বিষয়: জাতীয় সংসদ নির্বাচন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: