রাজশাহী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১


সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি করতো তারা


প্রকাশিত:
৫ জুন ২০২২ ০১:০৩

আপডেট:
৫ জুন ২০২২ ০৯:৫১

ছবি: গ্রেফতারকৃত আসামীরা

দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়কের গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতো। এরপর যাত্রীবাহী বাস, গরুবাহী ট্রাক ও মালবাহী ট্রাক আটকিয়ে সেগুলোতে ডাকাতি করতো। এছাড়া বিভিন্ন মালামালের গুদামেও ডাকাতি করতো চক্রটি। যেখানে গাছ কাটার সুযোগ থাকে না, সেখানে চালকের চোখে আলো ফেলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডাকাতি করত। পরে সর্বস্ব লুটে নিয়ে পালিয়ে যেত। এমন একটি চক্রের ১১ সদস্য র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হলে তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানতে পারে এলিট ফোর্সটি।

রাজধানীর অদূরে সাভার এলাকার বালিয়ারপুর মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাত দলের প্রধানসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ঠান্ডা-শামীম বাহিনীর মূলহোতা শামিম ওরফে সব্দুল, আনিসুর রহমান ওরফে ঠান্ডা (৪৫), সালাউদ্দিন (২৩), ইখতিয়ার উদ্দিন (৩১), সাইফুল ইসলাম (৩৫), জাহাঙ্গীর সরকার (৪০), সজিব ইসলাম (২৫), জীবন সরকার (৩৪), স্বপন চন্দ্র রায় (২১), মিনহাজুর ইসলাম (২০) ।

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি পাইপগান, দুটি ওয়ান শুটারগান, ছয় রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন একটি, শাবল একটি, রশি তিনটি, লোহার রড একটি, চাপাতি একটি, রামদা দুটি, চাইনিজ কুড়াল একটি, করাত একটি, হাউজ কাটার একটি, ছুরি দুটি, টর্চ লাইট দুটি, ব্যাগ ১১ টি, হ্যাক্সো ব্লেড দুটি, দা একটি, লেজার লাইট দুটি, প্লাস দুটি, দেশি কুড়াল একটি এবং হাতুড়ি একটি উদ্ধার করা হয়।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, ঠান্ডা-শামীম বাহিনীর মূলহোতা শামীম ওরফে সব্দুল এবং তাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড আনিসুর ওরফে ঠান্ডা। তাদের নাম অনুসারে উক্ত বাহিনীর নাম রাখা হয় ঠান্ডা-শামীম বাহিনী। ডাকাতির ঘটনায় শামীম এবং আনিসুর একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে।

জেলে থাকার সময় তাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন অপরাধীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে। পরে জামিনে বের হয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে ডাকাত বাহিনী গড়ে তোলে। তাদের বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২৫ জন। এছাড়াও, তারা যে এলাকায় ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে সেই এলাকার স্থানীয় অপরাধী ডাকাত/মাদক ব্যবসায়ী ছাড়াও পরিবহন শ্রমিক/গোডাউনের কর্মচারী/নৈশ প্রহরীদের সঙ্গে যোগসাজশে ডাকাতির মূল পরিকল্পনা করে থাকে। ডাকাতিই হচ্ছে তাদের মূল পেশা।

গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সালাউদ্দিন ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পরে সার্বিক বিচার বিবেচনা করে আনিসুর, শামীম এবং সালাউদ্দিন একত্রে বসে ডাকাতির মূল পরিকল্পনা করে। কোন জায়গায় কখন কিভাবে ডাকাতি করা হবে, ডাকাতির তথ্য সংগ্রহের জন্য কাকে নিয়োগ করতে হবে, কিভাবে ডাকাতি সম্পন্ন করা হবে, ডাকাতিকৃত মালামাল কোথায় কখন কিভাবে পরিবহন, সংরক্ষণ ও কার নিকট বিক্রি করে অর্থ আদায় করা হবে ইত্যাদি পরিকল্পনা করা হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানে সালাউদ্দিন আগেই গোপনে অবস্থান করে তথ্য সংগ্রহ করত। ডাকাতি শেষে নির্বিঘ্নে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার বিষয়ে ঠান্ডা-শামীমকে পরিকল্পনা দিতো এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতো।

ডাকাত দলের পরিচয়

গ্রেফতারকৃত ইখতিয়ার উদ্দিন ওই বাহিনীর অন্যতম সদস্য। সে পেশায় ড্রাইভার। বিভিন্ন সময় ডাকাতির ধরন অনুযায়ী মিনি ট্রাক/মাইক্রোবাসসহ চাহিদা অনুযায়ী যানবাহন সরবরাহ করে নিজে চালকের ভূমিকা পালন করত। ডাকাতির পূর্বে ঘটনাস্থল রেকি, ডাকাতির সময় ও ডাকাতি শেষে ঘটনাস্থল হতে পলায়ন এবং ডাকাতির মালামাল পরিবহনের দায়িত্ব পালন করে থাকে।

গ্রেফতার সাইফুল পেশায় রাজমিস্ত্রি। ডাকাতি করার সময় সে তালা ভাঙা, দেওয়াল ভাঙা, গাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করাসহ ডাকাতির মালামাল বিক্রির দায়িত্ব পালন করে থাকে।

গ্রেফতার মিনহাজুল এবং মাধব চন্দ্র ‘ঠান্ডা-শামীম বাহিনী’র তথ্যদাতার কাজ করে থাকে। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করে স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে ঠান্ডা-শামীম বাহিনীর যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ডাকাতি পূর্ব রেকি এবং ডাকাতির সময় স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে অবস্থান করে ডাকাতিতে অংশ নেয়। মহাসড়কে ডাকাতির সময় তারা গাছ কেটে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কাজ করে থাকে।

গ্রেফতার জাহাঙ্গীর পেশায় ইটভাটার শ্রমিক। সজীব ও জীবন পেশায় গার্মেন্টস শ্রমিক। স্বপন চন্দ্র পরিবহন শ্রমিক। তারা এসব পেশার আড়ালে ডাকাত দলের সঙ্গে ডাকাতিতে অংশ নিতো। ডাকাতি শেষে তারা আবার নিজ নিজ পেশায় চলে যায়।

গ্রেফতার আনিসুর ওরফে ঠান্ডা ২০০৪ সাল থেকে ডাকাতি করে আসছে। ২০১৬ সালে শামীমের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে তারা একসঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতে থাকে। এছাড়া ঠান্ডা-শামীম বাহিনী তাদের ডাকাতির ধরন এবং চাহিদা অনুযায়ী ভাড়ায় লোকবল সংগ্রহ করে থাকে। এই বাহিনী ইতোমধ্যে গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, টাঙ্গাইল এলাকায় বহু ডাকাতি করেছে বলে জানা যায়। তারা বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে। ডাকাতির মালামালের অর্ধেক আনিসুর ওরফে ঠান্ডা এবং শামীম ভাগ করে নিত। বাকি অর্ধেক মালামাল অন্যদের কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া হত। ডাকাতি থেকে প্রাপ্ত সম্পদ ভোগ বিলাস ও মামলার খরচ মেটাতে ব্যয় করত বলে জানা যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে তারা বগুড়ার শেরপুর এলাকার মহাসড়কে ডাকাতির কথা স্বীকার করে। এছাড়াও সাভারের হেমায়েতপুরে একটি ব্যাটারির কারখানায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বেই তারা গ্রেফতার হয়।

গ্রেফতার ‘ঠান্ডা-শামীম বাহিনী’র মূলহোতা শামীমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সাতটি ডাকাতি মামলা ও আনিসুরের বিরুদ্ধে ডাকাতি, মাদক ও বিভিন্ন অপরাধের পাঁচটি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

 

আরপি/এসআর-০৯



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top