রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


জীবিকার খোঁজে রাব্বি

`ও কাকা, ও দাদা একটা কিছু লন'


প্রকাশিত:
১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:৫২

আপডেট:
১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:৫২

জীবিকার খোঁজে রাব্বি

"কাকা একটা কিছু লন না, ও দাদা একটা কিছু লন না দাদা" পেছন থেকে একজন বয়োঃবৃদ্ধা এসে দশটি টাকা পকেট থেকে বের করে দিতে চাইলে ছেলেটি বলে উঠলো, ’টাকা লমুনা কাকা। আপনাগর বাড়িতে ছোট বাবু আছে না, একটা নজর কাঠি নিলে বাবুদের অন্য কারো নজর লাগবে না’। বাবুদের হাতের বালাও আছে, একটা লন না কাকা। বলছিলাম মাত্র দশ বছরের কম বয়সী এক বালকের কথা।

বুধবার ১৬ ডিসেম্বর নওগাঁর ধামইরহাটে বিজয় দিবসে তথ্যচিত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা হল রাব্বি নামে ছোট্ট এক বালকের সাথে। কিছুক্ষণ কথা হলে জানতে পারলাম জন্মের আগে ওর বাবা মারা গেছেন। বাবার নাম কি জানতে চাইলে সে বলতে পারেনি, ভুলে গেছে। বাবা মারা যাওয়ায় অভাবের সংসারে মায়ের সাথে ওকে একাই অর্থের খোঁজে ফেরিওয়ালা হয়ে পথে পথে ঘুরতে হয়। বাবা না থাকায় বহু আগেই বাবার আদর যত্ন সে ভুলে গেছে।

কিছুক্ষণ কথা বলার কোন এক ফাকে জানা গেলো, বাড়ি তার নাটোর জেলায়। দেশ বিদেশে ঘুরতে ঘুরতে গ্রামের নামটি ভুলে গেছে। মায়ের নাম জানতে চাইলে বলে উঠলো, মার নাম শাকিলা।

এই বয়সে লেখাপড়া না করে করছো কেন জানতে চাইলে রাব্বি বলে, ’লেখাপড়া করলে আমাকে খেতে দিবে কে, পড়র জন্য তো অনেক টাকা লাগে এতো টাকা পাবো কোথায়। মা ছাড়া আমার দেখার তো কেউ নেই।

রাব্বি আরও বলে, আমার আব্বা জন্মের আগেই মারা গেছে। মা ভিক্ষা করা পছন্দ করেনা। তাই কাজ কওে খাচ্ছি। অপনি চাইলে কিছু কিনে আমাকে সাহায্য করতে পারেন।

সারাদিন কুয়াশা, কনকনে শীতে গায়ে তেমন শীতবস্ত্র নেই। তার চোখে-মুখে নেই কোন হাসি। বালককে দেখে মনে হল বেশ কিছুদিন হয়তো অনাহারে আছে কারণ শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট দুটোর দিকে তাকালে বার বার সেকথাটিই মনে জেগে ওঠে। এ বয়সে এমনই কি হবার কথা ছিল..? স্কুলে যাওয়ার সময় টুকুও হারিয়ে ফেলেছে সে। অথচ এ বয়সে যার হাতে খাতা-কলম আর কাঁধে ব্যাগ নিয়ে স্কুলের ক্লাসে যাবার কথা ছিল, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তার হাতে উঠেছে জীবিকা নির্বাহের উপকরণ, নজর কাঠি, বাচ্চাদের ঝুনঝুনানি, বাত ব্যথা ভালো হওয়ার মালা ও ব্যথানাশক তৈল বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে হয়ত মায়ের মুখে খাবার তুলে দেবার গুরু দ্বায়িত্ব এখন পরেছে তার কাঁধে।

অন্যদিকে করোনায় থমকে গেছে জীবন। বিজয় দিবসে একদিকে বিজয়ের আনন্দ উল্লাস অন্যদিকে ক্ষুধা নিবারণের উপকরণ নিয়ে অর্থ সংগ্রহের জন্য এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ছুটে চলেছে বাপ হারানো বালক রাব্বি।

অভাবের তাড়নায় সারাদেশে গ্রামে-গঞ্জে জীবিকার প্রয়োজনে মাকে সাথে নিয়ে অর্থ জোগার করতে গিয়ে এভাবেই মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হয় রাব্বির মতো ভাগ্যাহত বালককে। খোলা আকাশের নিচেই তাদের জীবন স্বপ্ন থেমে যায় অনাথ বালকের মত।

উপজেলা চত্বরে রাব্বিকে একায় বাচ্চাদের নজর না লাগে এমন নামের নজর কাঠি দাম ৫০ টাকা এছাড়াও বাচ্চাদের ঝুনঝুনানি ৩০, বাত ব্যথা ভালো হওয়ার মালা ৪০ টাকা ও ব্যথানাশক তেল ৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব বিক্রি করে তেমন লাভ হয়না কারণ আধুনিকতার ছোয়ায় এসবের কদর একদম কমে গেছে।

তবে রাব্বির মত বালকেরা ভিক্ষা নয় পেটের ক্ষুধা নিবারনের জন্য শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে পরিশ্রম করে খেটে খেতে শিখেছে।

 

আরপি/ এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top