রাণীনগরে ৩ পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ

নওগাঁর রাণীনগরে সবজি গাছের নেটের বেড়া আগুন দিয়ে পোড়ানোকে কেন্দ্র করে তিনটি পরিবারকে গ্রাম্য শালিস বৈঠকের মাধ্যমে সমাজচ্যুত (একঘরে) করার অভিযোগ উঠেছে গ্রামের সমাজপতি আবু জাফর বকুলসহ ৮ জন প্রভাবশালী মাতব্বরের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে রবিবার ভুক্তভোগী আব্দুর রহিম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই তিনটি পরিবারের লোকজন বর্তমানে স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতে পারছে না। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের গহেলাপুর আকন্দপাড়া গ্রামে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১৬ তারিখে (বুধবার দুপুরে) ভ্যান চালক আব্দুর রহিমের স্ত্রী বাড়ির সংলগ্ন সবজি গাছের নেটের বেড়ায় আগুন দেখতে পান। আগুনের ধোওয়া দেখতে পেয়ে বাহিরে এসে দেখে প্রতিবেশী সফিয়তের ছেলে ও তার ভাতিজা দাঁড়িয়ে আছে। তখন তিনি তাদেরকে কে বা কারা নেটে আগুন দিয়েছে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানি না বলে চলে যায়। এ নিয়ে রহিম ও সফিয়ত পরিবারের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ওই ঘটনায় সফিয়ত তার ছেলে ও ভাতিজাকে কেন জিজ্ঞেস করা হয় মর্মে গ্রামের মোড়লদের কাছে বিচার দাবি করেন।
তার প্ররিপ্রেক্ষিতে সমাজপতিরা ওই রাতেই অভিযুক্ত আব্দুর রহিমকে শালিস বৈঠকে ডাকে। কিন্তু রহিম সমাজপতিদের কাছে রবিবার পর্যন্ত সময় চায়। শালিসি বৈঠক থেকে তাকে সময় দেয়া হয়। পূনরায় রবিবার দিন বৈঠকে বসে মাতব্বররা। এসময় রহিমকে উপস্থিত হওয়ার জন্য মাতব্বরদের নির্দেশে আসাদুল নামের একজনকে পাঠানো হয়। বৈঠকে উপস্থিত হয়ে রহিম তার কোন লোকজন না থাকায় পূনরায় সময় চান। কিন্তু সময় দেওয়া হবেনা বলে বৈঠক থেকে উঠিয়ে দেয় রহিমকে। এসময় রহিম বাড়িতে আসলে কিছু পরে বাবলু খাঁন নামের একজন এসে রহিমকে বলে সমাজে থাকতে চাইলে ৫হাজার টাকা নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত হতে।
কিন্তু রহিম টাকা না দেওয়া ও সময় চাওয়ার অপরাধে সমাজপতি আবু জাফর বকুল, মুঞ্জু সাস্টার, ওয়াহেদ আলী লেবু, কামরুল ইসলাম, কালাম সরদার, হামিদুল খাঁন, নাসির আকন্দ ও মান্নান আকন্দ এই ৮ সমাজপতিরা রহিমের বড় দুই ভাই আব্দুল মজিদ ও আব্দুস সামাদকে ভাই আব্দুর রহিমের পক্ষে থাকার কারণে তাদের দুজনকেও সমাজচ্যুত করার ঘোষনা দেন এবং গ্রামের সবাইকে এই ৩ পরিবারের সঙ্গে কোন প্রকারের লেনদেন কিংবা যোগাযোগ না করার নির্দেশ দেয়া হয়। যদি কেহ তাদের সাথে কোন রকম কথা বলে তাহলে তাদের ৫০০টাকা জরিমানা দিতে হবে বলেও হুশিয়ারী দেন মাতব্বররা।
আব্দুর রহিম বলেন, আগুন লাগার বিষয়ে আমি কোথাও অভিযোগ করিনি। কিন্তু গ্রামের আবু জাফর বকুলসহ মাতব্বররা বিনা অপরাধে বিনা কারণে অন্যায় ভাবে আমাকেসহ আমার বড় দুই ভাইকে সমাজচ্যুত করেছে। আমি ভ্যান চালিয়ে জীবন-যাপন করি। তবে প্রতিবেশী সফিয়তের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিলো। সেই কারণে হয়তো সফিয়ত গ্রামের প্রভাবশালী মাতব্বরদের নিয়ে এই ষড়যন্ত্র করেছে। গ্রামের সবাইকে আমাদের ৩পরিবারের সঙ্গে কোন প্রকারের লেনদেন কিংবা যোগাযোগ না করার নির্দেশ দেয়া হয়। আমাদের সাথে কেউ যদি কোন রকম কথা বলে তাহলে তাদের ৫০০টাকা জরিমানা দিতে হবে বলে হুশিয়ারী দেন মাতব্বররা। এতে আমিসহ আমার দুই ভাই পরিবার নিয়ে সামাজিকভাবে চলাফেরা করতে পারছিনা। আমার বাড়ির সংলগ্ন একটি ছোট্ট মুদির দোকান আছে দোকানের ব্যবসাসহ বকেয়া আদায় করতে পারছিনা। বকেয়া টাকা চাইলে কেউ আমার সাথে কথা বলছেনা। আমাদেরকে সমাজচ্যুত করার কারনে আমি রবিবার মাতব্বরদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
রহিমের বড় ভাই আব্দুস সামাদ বলেন, আমার ছোট ভাই আ: রহিম শালিস বৈঠকের সময় চাইলে সময় না দিয়ে মাতাব্বরা তড়িঘড়ি করে জুরি বোর্ড গঠন করে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে মাতাব্বরা আমাকে ও আমার বড় ভাই আ: মজিদকে ডেকে বলে তোমরা যদি দশজনের পক্ষে না ভাইয়ের পক্ষে তখন আমরা বলি সমাজের পক্ষেও আছি আমার ভাইয়ের পক্ষেও আছি। আমরা আরো বলি আমার ভাই চুরি করেছে না কোন নোংরামী করেছে যে আপনারা তাকে সমাজ ত্যাগী করলেন। তখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদেরকেও সমাজচ্যুত ঘোষনা করে।
ওই গ্রামের প্রভাবশালী মাতব্বর আবু জাফর বকুল জানান, রহিম আমাদের কথা শোনে না সে সমাজকে মানে না। তাই তাকে ও তার দুই ভাইয়ের পরিবারের কাছ থেকে আমরাই দুরে সরে আছি। আমরা তাদের সমাজচ্যুত করিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন এই বিষয়ে লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আরপি/আআ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: