নিয়ামতপুরে গোপন বাল্যবিয়ে প্রকাশ্যে আসতেই সাংবাদিকের বাড়িতে হামলার চেষ্টা
গোপন বাল্যবিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসতেই নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ইসলামের বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল করিম ও তার ভাগ্নে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের লোকজন।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের নিমদীঘি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। গত ১৩ জুলাই ‘নিয়ামতপুরে বাল্যবিয়ে বন্ধ করলেন ইউএনও, বিয়ে দিলেন আ’লীগ নেতা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের জেরে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
এর আগে গত ১০ জুলাই গভীর রাতে সাংবাদিক নূরুল ইসলামের প্রতিবেশী রফিকুল ইসলামের দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে জেসমিন খাতুনের (১৪) বাল্যবিয়ে দেন আবদুল করিম ও তার ভাগ্নে জাহাঙ্গীর আলম। যুবলীগ কর্মী এই গ্রামের বাসিন্দা মৃত সোহরাব আলীর ছেলে সজিব আলীর বাড়িতে ওই বিয়ে পড়ান স্থানীয় এক মৌলভী। এর আগে ওই ছাত্রীর সহপাঠির দেয়া খবরের ভিত্তিতে কনের বাড়িতে অভিযান চালান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়া মারীয়া পেরেরা। ওই সময় তার সাথে থানার ওসি খায়রুল ইসলাম ছিলেন। খবর দিয়ে ডেকে আনা হয় ওয়ার্ড সদস্য শহিদুজ্জামান কাজলকে।
ওই সময় ছোট মেয়েকে সরিয়ে রেখে বড় মেয়ে আলিয়ারা খাতুনকে ইউএনওর সামনে হাজির করেন কনের বাবা রফিকুল ইসলাম। বোনের বিয়ে উপলক্ষ্যে সেদিন বাবার বাড়িতে এসেছিলেন আলিয়ারা। বাল্য বিয়ে না দেয়ার শর্তে কনের বাড়ি থেকে ফিরে যান ইউএনও। কিন্তু ওই রাতেই দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বাল্য বিয়ে দেন আওয়ামী লীগ নেতা। পরে এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন আবদুল করিম ও জাহাঙ্গির আলম।
এরই জেরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ইসলামের বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালান জাহাঙ্গীর আলম ও তার পরিবারের লোকজন। আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল করিমের নির্দেশেই ওই হামলা হয়েছে। ওই সময় নূরুল ইসলাম বাড়ির বাইরে ছিলেন। হামলাকারীরা নূরুল ইসলামের স্ত্রী রহিমা ইসলামকে হত্যাসহ খাবার পানি এবং সেচের পানি বন্ধসহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি হুমকি দেয়া হয়।
শুক্রবার (১৭ জুলাই) সকালে বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে সেচের পানি বন্ধ করে দেয়া হয়। এই ঘটনার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় সাংবাদিক পরিবার।
এবিষয়ে নূরুল ইসলাম জানান, ঘটনার রাতেই তিনি বিষয়টি ইউএনওকে জানিয়েছেন। পরে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু ঘটনার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেননি ইউএনও। এর আগে হামলার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন ইউএনও। কিন্তু ইউএনও অভিযান কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটায় এনিয়ে ইউএনওর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল করিম। তবে নিয়ামতপুর থানার ওসি খায়রুল ইসলাম বলেন, এনিয়ে থানায় এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
জানতে চাইলে ইউএনও জায়া মারীয়া পরেরা বলেন, তারা একটা অপরাধ করেছেন, এটি জানাজানি হবার পর সাংবাদিক পরিবারকে হুমকি দেবেন, এটি গুরুতর অপরাধ। হুমকির বিষয়টি নূরুল ইসলাম আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাকে মামলা দায়েরের পরামর্শ দিয়েছি। পুলিশ তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা নেবে।
আরপি/আআ-০১
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: