রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


করোনায় স্বপ্ন ভেঙ্গেছে নওগাঁর মৃৎ শিল্পীদের


প্রকাশিত:
১৮ মে ২০২০ ২২:৫৯

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ২০:২৪

নিজেদের তৈরী মৃৎ শিল্পের সাথে একজন নারী মৃৎ শিল্পী। স্বপ্নভঙ্গের হতাশা চেহারায় দৃশ্যমান।

আধুনিকতার ছোঁয়াই গ্রাম বাংলার আবহমান কালের ঐতিহ্য মৃৎ শিল্প প্রায় বিলুপ্তীর পথে । প্লাাস্টিকের পণ্য বাজার ছয়লাব। অনেকেই বাপ দাদার এ পেশা বদল করে অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন । আর যেটুকু আছে করোনার কারনে তাদের কপাল পুড়েছে ,ভেঙ্গেছে স্বপ্ন ।

চৈত্র ও বৈশাখ এবং জৈষ্ঠ মাসে গ্রামে-গঞ্জে বসে জমজমাট মেলা। চৈত্র সংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখে হয় সবচেয়ে বড় আয়োজন। এ সময় জমে ওঠে মৃৎ শিল্পীদের ব্যবসা। মাটির তৈরি খেলনা ও তৈজসপত্র বিক্রি বেড়ে যায়। মূলত এই দুই তিন মাসে যা আয় হয়, তা দিয়েই বছরের বাকি সময় চলেন কুমারপাড়ার মৃৎ শিল্পীরা।

অন্যান্য বছরের মতো এবারও মেলার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার ৫০ জন মৃৎ শিল্পী। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারনে তাদের প্রস্তুতি ও সকল স্বপ্ন ভেঙ্গেছে মৃৎশিল্পীদের। 

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌর সভার ২ নং ওর্য়াড পালপাড়া গ্রামের মৃৎ শিল্পী অখিল চন্দ্র পাল (৪৫) বলেন, ‘বছরে প্রায় ১০ মাস কোনো ব্যবসা হয় না। আমরা চৈত্র ও বৈশাখ মাসের অপেক্ষা করি। এই দুই মাসে গ্রামে অনেক মেলা বসে। এসব মেলায় বিক্রি হয় মাটির তৈরি জিনিসপত্র, খেলনা।’

‘আমরা তিন-চার মাস আগে মাটির জিনিসপত্র ও খেলনা তৈরি করে মেলার প্রস্তুতি নিই। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর কোথাও মেলা বসছে না। মাটির জিনিসপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছি আমরা’ বলেন অখিল চন্দ্র পাল।

মৃৎশিল্পী পারুল পাল বলেন ‘প্রতিবছর চৈত্র ও বৈশাখ মাসে ১০ থেকে ১৫টি গ্রাম্য মেলায় অংশ নিই আমরা। এতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ব্যবসা হয়। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ১ লাখ টাকার বেশি লাভ থাকে। সেই টাকায় আমরা সারা বছরের সংসারের খরচ চালাই।’

আরও বলেন, ‘আমরা পুঁজি লাগিয়ে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে ঘরে ফেলে রেখেছি। কোথাও কোনো মেলা নেই। এই ক্ষতির ঘানি আমাদের অনেক বছর টানতে হবে।’

উপজেলার ঠুকনিপাড়ার সনজিৎ কুমার পাল পাল (৪০) বলেন , এ উপজেলায় ২৫ টির বেশি কুমার পরিবার আছে । অধিকাংশ পরিবারই পৈতৃক এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছে। এখন আমরা অল্প কিছু মৃৎ শিল্পী পুরনো পেশা ধরে রেখেছি ।’

মালতি পাল ( ৩০) বলেন ‘চৈত্র ও বৈশাখ এবং জৈষ্ঠ মাসের আয়ের ওপর অনেকের বাড়ি-ঘর মেরামত, মেয়ের বিয়ে দেওয়াসহ নানা রকম কাজ নির্ভর করে। অথচ এ বছর আমাদের পুঁজি হারাতে হচ্ছে’, বলেন তিনি।

মৃৎ শিল্পীদের বক্তব্য, করোনার কারণে আমরা আরও বেশি দরিদ্র হয়ে গেলাম। আমাদেও স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেল ।

আরপি/ এএন



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top