রাজশাহী মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১


বৃষ্টির জন্য হাহাকার

উত্তরাঞ্চলে ধান চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কায় কৃষক!


প্রকাশিত:
১৯ জুলাই ২০২২ ০৩:৫২

আপডেট:
১৯ জুলাই ২০২২ ০৫:৪৪

তীব্র খড়া আর অনাবৃষ্টির কারণে পুড়ছে ফসলের মাঠ। মাটি ফেটে চৌচির। ছবি: প্রতিনিধি মহাদেবপুর (নওগাঁ)

‘বেলা দ্বি-প্রহর, ধু-ধু বালুচর, ধূপেতে কলিজা ফাটে, পিয়াসে কাতর; আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই, আল্লাহ মেঘ দে-আসমান হইলো টুটা-ফুটা, জমিন হইলো ফাটা’ বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দিনের এই গানের মত উত্তরাঞ্চলে আজও বৃষ্টির জন্য হাহাকার।

প্রকৃতিতে এখন ভরা বর্ষা মৌসুম চললেও গত তিন সপ্তাহ থেকে তীব্র খড়া আর অনাবৃষ্টির কারণে পুড়ছে ফসলের মাঠ। মাটি ফেটে চৌচির। আউশ ও আমন ধান চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। আষাঢ় গেল। চলছে শ্রাবণ মাস। কিন্তু বইছে না শ্রাবণের ধারা।

গত এক দশকে প্রকৃতির এই রূক্ষতা দেখেনি দেশের মানুষ। বৃষ্টির অভাবে কৃষকরা তৈরি করতে পারছেন না আমন চাষের জমি, পড়েছেন চরম বিপাকে। শুকিয়ে যাচ্ছে বীজতলা ও চারা। গভীর-অগভীর নলকূপ থেকে পানি দিয়ে জমি তৈরি করায় বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে তাদের। এ বছর ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

আষাঢ়-শ্রাবণ মাস আমনের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। এ মৌসুমে বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির কোনো দেখা নেই। বৃষ্টির অভাবে জমি তৈরি করতে না পেরে চরম বেকায়দায় পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষক। কেউ কেউ বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে পানি নিয়ে জমিতে চারা রোপণ করেছেন। সেচ দিয়ে চারা রোপণ করলেও পানি ধরে রাখতে পারছেন না চাষিরা। সেই জমিগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন, ৫-৬শ’ টাকা দিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে পানি সেচের মাধ্যমে আমন ধান লাগাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। বাড়তি খরচের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে বিপর্যয়ের আশঙ্কা। এছাড়াও আউশ ধান খেতে সেচ দেয়া নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন।

সেচের মাধ্যমে পানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেই সাথে বাড়ছে পোকামাকড়ের উপদ্রব। উৎপাদন লক্ষ্য পূরণে  ব্যত্যয় ঘটবে বলে ধারণা করছেন চাষিরা।

চাষিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমন ও আউশ আবাদের জন্য বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। পানির অভাবে অনেকেই এখন পর্যন্ত আমনের জমিই তৈরি করতে পারেননি। কেউ কেউ সেচ দিয়ে জমি তৈরি করে চারারোপণ করেছেন কিন্তু বৃষ্টির অভাবে সেগুলোও লালচে আকার ধারণ করছে। বৃষ্টি না হলে এগুলোও রক্ষা করা সম্ভব নয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ খরিপ-২ মৌসুমে এ অঞ্চলে ৪ লাখ ৩ হাজার ৪৬৬ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ হাজার হেক্টর জমিতে চারা রোপণ হয়েছে। এছাড়া আউশের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে। রংপুর বিভাগে ৬ লাখ ১৬ হাজার হেক্টরে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও বিপরিতে ১৯ হাজার হেক্টর অর্জন হয়েছে।

এদিকে রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছরের জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৯৭ মিলিমিটার এ বছর মাত্র ১৭ মিলিমিটার। তাপমাত্র ওঠানামা করছে ৩৬ থেকে ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ মাসে ৪৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা কিন্তু সেই তুলনায় এখানে সে বৃষ্টি রেকর্ড হয়নি।

এছাড়া বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, রাজশাহী, রংপুর এবং নীলফামারীর উপর দিয়ে মৃদু তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে। উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে অবস্থানরত লঘুচাপটি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে মৌসুমী বায়ুর অক্ষের সাথে মিলিত হয়েছে।

মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, উড়িষ্যা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টিপাতের বিষয়ে তিনি জানান, দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরণের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ জানান, আমন ও আউশ ধান চাষাবাদে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে প্রতিটি সেচযন্ত্র চালু করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। নিচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে আমন রোপণ চলছে। এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সামনের সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আমন রোপণে লক্ষ্যমাত্রা অজির্ত হবে বলে আশা করছেন তিনি।

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সম্পূরক সেচ দিয়ে চাষাবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রেরণ করা চিঠি প্রাপ্তির সত্যাতা নিশ্চিত করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, সেচযন্ত্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে এবং তারা সেচকার্য পরিচালনা করছেন।

 

আরপি/ এমএএইচ-০১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top