রাজশাহী বুধবার, ১৪ই মে ২০২৫, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩২


রাজশাহী কলেজের প্রশাসনিক বোর্ডে ছাত্রলীগের ভয়ংকর রূপে ফেরার বার্তা, ছয় মাসেও নেই অগ্রগতি


প্রকাশিত:
১৪ মে ২০২৫ ০০:৫৫

আপডেট:
১৪ মে ২০২৫ ০৩:২৬

ফাইল ছবি

রাজশাহী কলেজের প্রশাসনিক ভবনের ডিজিটাল স্ক্রলিং বোর্ডে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আবারও আসবে ভয়ংকর রূপে, সাবধান’ এই বার্তা ভেসে ওঠার ঘটনাটি ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও দায়ী ব্যক্তিকে শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি কলেজ প্রশাসন। গত ১০ নভেম্বর বিকেলে এ ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়।

জানা যায়, ঘটনার দিন আইটি ইনচার্জ দাবি করেছিলেন, বিকেল ৫টার দিকে তিনি অফিসের কম্পিউটার বন্ধ করে চলে যান এবং তার ধারণা, বহিরাগত কেউ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এই বার্তা স্ক্রলে প্রচার করেছে। তবে প্রশ্ন রয়ে যায় এত গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কীভাবে এমন নিরাপত্তা ভঙ্গ সম্ভব হলো? ঘটনার পরপরই কলেজ প্রশাসন জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে তদন্তের আশ্বাস দেয়। সেসময় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলী জানান, ‘দোষী ব্যক্তিকে দ্রুত চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আইটি বিভাগের পক্ষ থেকেও প্রযুক্তিগত সহায়তায় তদন্ত চালানোর কথা জানানো হয়। তবে সময় গড়িয়েছে সাত মাস, তদন্তেও নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোষী ব্যক্তির পরিচয়, ঘটনার কারণ কিংবা ভবিষ্যৎ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ কোনো কিছুই জানানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে এখন কলেজ কর্তৃপক্ষ একপ্রকার নিশ্চুপ অবস্থানে রয়েছে।

কলেজ প্রশাসন গঠিত সেই তদন্ত কমিটির সদস্যরা ছিলেন- কমিটির প্রধান ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৎকালীন প্রফেসর ড. মো: আব্দুল মতিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ মো: জহিরুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বারিক মৃধা ও আইসিটি বিভাগের প্রভাষক আর এম ইমতিয়াজ আলম।

শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের এমন নীরব আচরণে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এমন কি ঘটনায় জড়িতদের রক্ষা প্রশাসনের এমন নিশ্চুপের কারণ হতে পারে বলেও গুঞ্জন উঠেছে। অনেকের ভাষ্য, প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা দ্রুত তদন্তের আশ্বাস পেয়েছিলাম। কিন্তু ছয় মাসেও কেউ শনাক্ত না হওয়া হতাশাজনক। ভবিষ্যতে যদি আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা নিরাপদ থাকব কীভাবে?

রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির জানান, ঘটনার পরপরই আমরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে কলেজ প্রশাসনকে জানাই। তারা আমাদের সহায়তার প্রশংসা করে এবং তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দেয়। কিন্তু পরে আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। আমাদের কেউ কিছু জানায়নি। এতে আমরা চরমভাবে আশাহত।

এ বিষয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী কলেজ শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাসুম বলেন, ঘটনার পেছনে ফ্যাসিবাদী সরকারের ভয়ের রাজনীতির প্রতিফলন রয়েছে। ছাত্রশিবির ঘটনার পরপরই কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায় এবং অভিযুক্তকে শনাক্ত করতে সহায়তা করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি। প্রয়োজনে আমরা আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।

প্রশাসনের দীর্ঘ নীরবতা ও তদন্তে অগ্রগতির অভাবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট মহলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে এটি কি প্রশাসনিক গাফিলতি, নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল?

তৎকালীন তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, প্রিন্সিপালের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছি সেই আমলেই। আমি রিপোর্ট করে সুপারিশ মালা দিয়েছি এই পর্যন্ত আমার দায়িত্ব। প্রিন্সিপাল এটার ব্যবস্থা করবে কি করবে না সেটাতো আর আমি বলতে পারবো না।

এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মু যহুর আলী বলেন, যে ব্যক্তি এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাকে আমরা সেই সময় সনাক্ত করেছি। প্রশাসনকেও জানিয়েছি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। পরবর্তীতে কাজের চাপে আর সে বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে বর্তমানে প্রশাসনই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে।

এ বিষয়ে জানতে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। ফলে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায় নি।

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top