রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


বদলগাছীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বরাদ্দকৃত

নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়; ৫ মাসেও ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ


প্রকাশিত:
৫ আগস্ট ২০২১ ০০:৫৩

আপডেট:
৫ আগস্ট ২০২১ ০০:৫৩

ছবি: নিম্নমানের  সুরক্ষা সামগ্রী

নওগাঁর বদলগাছীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্লিপের বরাদ্দ থেকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণে নামহীন কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে গত মার্চ মাসে বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও কোমলমতি শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উপকরণগুলো পরিবর্তনের কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজসে এমন মানহীন সুরক্ষা সামগ্রি সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কোমলমতি শিশুদের জন্য এমন গুরুত্বপূর্ন একটি জায়গায় নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রি সরবরাহ করায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৩৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে স্লিপ থেকে ১২১ টি বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার টাকা, ১১ টিতে ৭০ হাজার টাকা এবং ১টিতে ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দের টাকা দুই ধাপে প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপের টাকা থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ হিসেবে- স্থায়ী ইনফ্রায়েড/নন-কন্টাক্ট থার্মোমিটার, স্প্রে মেশিন, ব্লিচিং পাউডার, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, জগ, মগ ও বালতি সহ অন্যান্য সামগ্রি ক্রয় করা হয়। গত ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বন্ধ হওয়া স্কুলগুলো চলতি বছরের ৩০ মার্চ চালু হওয়ার প্রস্তুতি চলছিল।

এজন্য ১০ মার্চ তড়িঘড়ি করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রি রাজশাহীর ‘মার্চইডুকিট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ‘কে৯ প্রো ইন্টিলিজেন্ট সেনসর সোয়াপ ডিস্পেন্সার’ মেশিন এবং ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ কেনা হয়। যা প্রতিটি মেশিনের মূল্য ধরা হয় ৭ হাজার টাকা এবং ২ হাজার মিলি হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর দাম ধরা হয় ১ হাজার ২০০ টাকা। স্যানিটাইজার বোতলের মোড়কের গায়ে শুধুমাত্র হ্যান্ড স্যানিটাইজার লিখা থাকলেও কোম্পানির কোন নাম লিখা ছিলনা। অর্থ্যাৎ নামহীন কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যা কোমলমতি শিশুদের জন্য অনেকটা ঝুঁকিপূর্ন।

ওই সময় ইন্টিলিজেন্ট সেনসর সোয়াপ ডিস্পেন্সার যে মেশিনটি কেনা হয়েছিল তার বাজারমূল্য ৪ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। নামহীন কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মেশিন বাজার থেকে তুলনামুলক বেশি দাম দিয়ে কেনা অনেকটা অস্বচ্ছতা দেখা দিয়েছে। প্রথম ধাপের অর্ধেক টাকা দিয়ে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রি কেনার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় নামমাত্র কেনাকাটা করে কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে টাকাগুলো নয়ছয় করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমরা অফিসের অধীনে চাকরি করি। শিক্ষা অফিসার যে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন আমাদের সে কোম্পানির পণ্য কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। আর যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হয়েছে বোতলের গায়ে কোন কোম্পানির নাম আছে তা দেখিনি। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও তা আর পরিবর্তন করা হয়নি। তবে স্প্রে মেশিনসহ আরও যেসব পন্য ওই কোম্পানি থেকে কেনার কথা ছিল তা নিজেদের ইচ্ছামতো কিনতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বদলগাছী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফজলুর রহমান বলেন, কোন নামহীন কোম্পানির পন্য সরবরাহ করা হয়নি। যাচাই বাছাই করে নির্দিষ্ট কোম্পানির মালামাল কেনা হয়েছে। এছাড়া কোন অনিয়মের ঘটনাও ঘটেনি।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নওগাঁ জেলা সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মকুল বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এটাকে মোকাবেলা করে সরকারের যেভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিল তা করা হয়নি। তার ওপর আবার নিম্নমানের সামগ্রি ক্রয় করা হয়েছে যেখানে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। এরসাথে যারা জড়িত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করছি।

 

আরপি/এসআর-১২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top