এক রাস্তায় একাধিক প্রকল্পের অর্থ লোপাটের অভিযোগ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় একটি রাস্তাকে ঘিরে একাধিক প্রকল্প বরাদ্দ দেয়ায় ব্যাপক অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ঠ প্রকল্পের সভাপতির বিরুদ্ধে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ রাস্তার কাজ না করেই বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাইতালি হতে পশ্চিম মির্জাপুর পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা রয়েছে। আর নাচোল পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড অংশিদারিত্বমূলক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ এর আওতায় ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে পাইতালি গ্রামের মির্জাপুর বাজার হতে উঁচু পুকুর পর্যন্ত রাস্তা ইট সলিং করণ বাবদ এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদাণ করা হয়। কিন্তু মির্জাপুর বাজার হতে উঁচু পুকুর পর্যন্ত রাস্তা ইট সলিং করণের কথা থাকলেও তা সম্পূর্ণ ভাবে করা হয়নি। যেনতেন ভাবে কিছু ইট দিয়ে কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
এদিকে নাচোল পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক আবারো ২০২১-২২অর্থ বছরে একই প্রকল্পের আওতায় পাইতালি গ্রাম হতে মির্জাপুর বাজার পর্যন্ত ৪টি কালভার্ট নির্মাণে এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও সরেজমিনে গিয়ে ওই রাস্তায় ২টি কালভার্ট নির্মাণ দেখা যায়। আর বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে পাইতালি গ্রামের আয়েশ উদ্দিন ও আব্দুস সামাদ জানান, পাইতালি গ্রাম হতে মির্জাপুর বাজার পর্যন্ত যে চারটি কালভার্ট নির্মাণের কথা তা যেনতেন ভাবে দুটি কালভার্ট নির্মান করা হয়েছে। আমাদের এই রাস্তায় গ্রামবাসীদের টাকায় যে পুরাতন পাইপ পূর্বে ক্রয় করা ছিলো সেগুলো কে পূনঃস্থাপন করে তার উপরে লোহার রড ছাড়াই ইট দিয়ে পুনরায় কালভার্ট নির্মাণ দেখানো হয়েছে। প্রায় ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে কালভার্ট নির্মানের নামে। প্রকল্পের সভাপতি ও নাচোল পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা এসব টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে আমরা ধারনা করছি।
অন্যদিকে চলতি বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনের সাংসদ আমিনুল ইসলামের বরাদ্দ হতে গ্রামীন উন্নয়ন অবকাঠামো (কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় পাইতালি গ্রাম হতে মির্জাপুর বাজার পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা সংস্কারের জন্য ৮ মেটিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের সভাপতি গ্রামের মসজিদে মাইকিং করে গ্রামবাসীদের স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে ওই রাস্তার কাজ যেনতেন ভাবে সংস্কার করলেও দৈনিক লেবারের বিলে হিসাবে ব্যয় দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা (প্রথম ৪ মে.টন) পুরোটাই উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে মির্জাপুর বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ী পলাশ ও জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত ১ মাস পূর্বে পাইতালি গ্রামের বিএনপি নেতা গোলাম মোস্তফা গ্রামের মসজিদে মাইকিং করে পাইতালি হতে মির্জাপুর বাজার পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা সংস্কারের জন্য গ্রামবাসীদের স্বেচ্ছা শ্রম আহ্বান করলে আমরা গ্রামবাসী সেই রাস্তা স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে সংস্কার করি। পরে আমরা জানতে পারি এই রাস্তায় সরকারিভাবে একাধিক বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। যা এ প্রকল্পের সভাপতি আত্মসাৎ করেছেন। আর তাই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে সরকারি বরাদ্দ যারা লোপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে এলাকাবাসী মনে করেন।
এ বিষয়ে নাচোল পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা হারুন অর রশিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রকল্পে অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আর নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তবে প্রকল্পের সভাপতি ও নাচোল পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার সাথে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আরপি/এসআর-১৬
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: