রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


অসহায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর পাশে এসআই উত্তম


প্রকাশিত:
৭ অক্টোবর ২০২০ ০১:২৯

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:১৯

রাজশাহী কলেজের অসহায় ও মেধাবী দুই শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছেন নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক উত্তম কুমার রায়। তাদের প্রক্যেকের পোশাক ও বই কেনার জন্য নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন এসআই উত্তম।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল খালেকের দপ্তরে একাদশ শ্রেণির মেধাবি শিক্ষার্থী রিপন হোসেনের হাতে সহায়তার অর্থ তুলে দেন এসআই উত্তম।

পরে আরেক মেধাবী শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম রনির হাতেও এসআই উত্তমের সহায়তার নগদ অর্থ তুলে দেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান ও উপাধ্যক্ষ আবদুল খালেক।

মেধাবী রিপন হোসেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের আন্দারিয়াপাড়ার জয়বুল হোসেন বাদশার ছেলে। অন্যদিকে একই উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের অনাথ শিমলা এলাকার জসিম উদ্দিনের ছেলে রনি। দীর্ঘদিন ধরেই রনির বাবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন। স্বামী-সংসার নিয়ে চিন্তায় ভারসাম্য হারিয়েছেন তার মা রহিমা বিবিও।

তবে রিপনের বাবা থেকেও নেই। তিন বছর বয়সে বাবা মা জুলেখা খাতুনসহ রিপনকে ফেলে যান বাবা। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় বাস করছেন। ছেলে রিপনকে নিয়ে নিত্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তার মা জুলেখা খাতুন।

রিপন গত বছর এবং রনি এবছর স্থানীয় উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫সহ এসএসসি পাশ করে।এবার রাজশাহী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে অর্থাভাবে গত বছর ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাদের।


প্রথমে রনিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে কমিউনিটি অনলাইন সংবাদপত্র বরেন্দ্র এক্সপ্রেস। সংবাদ প্রকাশ হয় স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম সেই সংবাদ ভাইরাল হয়ে যায়। তার ভর্তির দায়িত্ব নেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান। এই খবরে চোখ পড়ে অদম্য মেধাবী রিপনের। পরদিনই সেও ছুটে আসে রাজশাহী কলেজে। তারও ভর্তির দায়িত্বভার নেন অধ্যক্ষ।

গত বছরও রাজশাহী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারেনি রিপন। শেষে টাকা জোগাড় করতে ইটভাটায় কাজও করেছে সে। কিন্তু অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় চিকিৎসায় তার জমানো টাকা চলে যায়।

মানবিক অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমানের সহায়তায় এরই মধ্যে স্বপ্নের কলেজে ভর্তি হয়েছে অদম্য এই দুই মেধাবী। কিন্তু তাদের আগামীর স্বপ্ন পুরণের বড় বাধা দারিদ্য।

অসহায় এই দুই মেধাবীর খবরে চোখ আটকেছে দেশ ও বিদেশের বহু মানবিক মানুষের। অনেকেই সহায়তায় এগিয়ে আসার আশ্বাস দিয়েছেন।

এমনই একজন নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার এসআই উত্তম কুমার রায়। তাদের ইউনিফর্ম ও বই কেনা বাবদ দুজনকেই নগদ অর্থ সহায়তার দিয়েছেন তিনি। আগামীতেও তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন এসআই উত্তম।

বগুড়ার গাবতলি উপজেলার এলাকার বাসিন্দা এসআই উত্তম কুমার রায় পুলিশে কর্মরত প্রায় ১৪ বছর ধরে। এই দীর্ঘসময় পেশাগত দায়িত্বপালনের পাশাপাশি বহু মানবিক কাজেও অংশ নিয়েছেন উত্তম।

রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী পলিটেকনিজ ইনস্টিটিউটসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা করে যাচ্ছেন নিরবে। এছাড়া রাজশাহীতে চিকিৎসার জন্য আসামী দুস্থ রোগীদের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দেন এই মানবিক পুলিশ সদস্য। কারো অসহায় অবস্থার খবর পেলেই সহায়তা নিয়ে পৌঁছে যান তিনি।

এসআই উত্তম কুমার রায়ের মানবিক কাজের প্রশংসা করেছেন রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল খালেক। তিনি বলেন, এমন মানবিক মানুষ আছে বলেই অসহায় মানুষগুলো জীবনের মানে খুঁজে পান। সবাইকে অসহায় মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহবান জানান উপাধ্যক্ষ।

রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান বলেন, অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে হবে সব কলেজকে। এটা সবার দায়িত্ব, সমাজের দয়িত্ব। অর্থের অভাবে কেউ যেনো সমাজ ও দেশের বোঝা না হয়ে যায় সেই দিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top