রাজশাহী বুধবার, ১৫ই মে ২০২৪, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


রাবি শিক্ষকের উদ্ভাবন

এডিস মশার লার্ভা নিধন হবে মাছ দিয়ে


প্রকাশিত:
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৯:৫২

আপডেট:
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৯:৫৩

এডিস মশার লার্ভা নিধন চালাচ্ছেন

এবার প্রাণঘাতি রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। এডিস মশা বাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে এবছর বহু মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। মারাও গেছেন অনেকেই।

এই পরিস্থিতিতে এডিস মশার লার্ভা নিধনে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তারপরও নির্মুল হয়নি এডিস মশা। দীর্ঘ প্রায় দুই মাসেও এই মহামারির কোন সমাধান আসেনি এখনো।

এখন আশার আলো দেখিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম। এডিস মশার লার্ভা নিধনে ‘এ্যান- ওয়্যার লার্ভাসিডাল ট্র্যাপ’ বিশেষ কৌশল আবিস্কার করেছেন এই গুণি অধ্যাপক।

অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এই পদ্ধতিতে তেলাপিয়া মাছকে পানির মধ্যে খাঁচায় আটকে রেখে মশার লার্ভা ধ্বংস করা যাবে। যার ফলে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে অপরদিকে ক্ষতিকর এডিস মশার লার্ভা খেয়ে ধ্বংস করবে এই মাছ।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তেলাপিয়া মাছকে খাঁচায় বন্দী রেখে ড্রেনের পানিতে ডুবিয়ে রাখা হবে, যাতে তেলাপিয়া মাছকে কোন সাপ, ব্যাঙে না খেয়ে ফেলতে পারে। মাছকে কম খাবার দিতে হবে। যাতে মাছ ক্ষুধার্ত অবস্থায় মশার লার্ভা খেয়ে ফেলতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী এই ফাঁদ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সারানো যাবে।

তিনি আরো বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে যুগে যুগে ভয়াবহ রোগ-ব্যাধির প্রাদুর্ভাবের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। বাংলাদেশে ইদানিং যে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ অবস্থা বিরাজমান, আমার মতে এ দেশে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বা এর হুমকির মুখে পড়াটাই তার অন্যতম কারণ।

কয়েক বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে শহরের ড্রেন, ডোবা যখন পানিতে ভোরে যেত, তখন সেই পানির ভিতরে ছোটবড় অনেক ধরণের মাছের বিচরণ ছিল লক্ষণীয়। মশার ডিম ফুটে বেরোনো লার্ভা হচ্ছে ছোট-ছোট মাছের অত্যন্ত প্রিয় একটি মজাদার খাবার।

গবেষক আনোয়ারুল ইসলাম আরো বলেন, আমার পর্যবেক্ষণ মতে, নাইলোনটিকা জাতীয় মাছ তো মশার লার্ভা পেলে অন্য খাবারের ধারে-কাছেই যেতে চায় না। যেহেতু নাইলোনটিকা জাতীয় মাছ মশার লার্ভা খেয়ে ফেলার খুব চমৎকার ক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং এই জাতীয় মাছকে এডিস মশা সহ সকল জাতীয় মশার লার্ভা নিধনে শিকারী মাছ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিনি আরও যোগ করেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা প্রকল্পে এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছি। গবেষণায় দেখা গেছে, ড্রেনের মধ্যে থাকা মশার লার্ভা খেয়ে ফেলছে নাইলোটিকা জাতীয় মাছ। এভাবেই খাঁচায় আটকে রেখে মশার লার্ভা ধ্বংস করা সম্ভব।

অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, লার্ভা শিকারের জন্য নাইলোটিকা মাছকে খাঁচার ভিতরে আটকে রাখার সুবিধা একাধিক। প্রথমত অন্যান্য রাক্ষস জাতীয় মাছের হাত থেকে শিকারী নাইলোটিকা মাছকে রক্ষা করা; দ্বিতীয়ত, লার্ভা শিকারে অধিকতর দক্ষ হয়ে উঠা এই নাইলোটিকা মাছকে প্রয়োজনে এক ড্রেন থেকে অন্য ড্রেনে স্থানান্তর করে সীমিত সময়ে অধিক কার্যকর ভূমিকা রাখা যায়।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের পরামর্শে এবং উপ-উপাচার্য চৌধুরী জাকারিয়ার সহায়তায় শুক্রবার সকাল ৮ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া মসজিদের সামনের ড্রেনে এ্যান- ওয়্যার লার্ভাসিডাল ’ট্র্যাপ’ নামক নতুন পদ্ধতির লার্ভা নিধন ফাঁদ স্থাপন করা হয়।

এই পদ্ধতি ব্যবহার সম্পর্কে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া বলেন, দেশের শহরগুলোতে দিন দিন যে হারে ড্রেনে ময়লা আর্বজনা ফেলা হচ্ছে তাতে এডিস মশার লার্ভা বেড়েই চলেছে। এই নতুন পদ্ধতি শহরের ড্রেনে ব্যবহারের ফলে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি কমিয়ে আনা সম্ভব।

আরপি/ এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top