রাজশাহী সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


রাজশাহী কলেজে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় গোলাম আরিফ টিপুকে শেষ বিদায়


প্রকাশিত:
১৬ মার্চ ২০২৪ ১৫:৩৭

আপডেট:
১৬ মার্চ ২০২৪ ২১:৩৭

ছবি: জানাজার নামাজ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপুর মরদেহে গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে রাজশাহীতে। শনিবার (১৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় তার মরদেহ রাজশাহী কলেজের শহীদ মিনারের সামনে এনে রাখা হয়।

এ সময় রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক এবং পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ তার মরদেহে শেষবারের মতো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এতে ধীরে ধীরে তার মরদেহবাহী ফ্রিজিংভ্যানের পাশে থাকা রাজশাহী কলেজের শহীদ মিনার বেদী ফুলে ফুলে ভরে ওঠে।

ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু এই রাজশাহী কলেজেরই ছাত্র ছিলেন। এখান থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক এবং আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। রাজশাহী কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় এই শহরে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকায় মিছিল বের করে রফিক, জব্বার, সালামেরা শহীদ হলে ওই রাতেই রাজশাহী কলেজে প্রথম শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের সময়ও ছিলেন গোলাম আরিফ টিপু। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের জন্য রাজশাহীতে গঠন করা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন তিনি। এছাড়া এই ৫২'র ভাষা সংগ্রামী একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।

ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখায় ২০১৯ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে ভূষিত ভূষিত হন।

১৯৩১ সালের ২৮ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কমলাকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও তাই গোলাম আরিফ টিপুর পদচারণা ছিল রাজশাহীতে। গোলাম আরিফ টিপু ১৯৫৮ সালে একজন আইনজীবী হিসেবে এখানেই তার কর্মজীবন শুরু করেন। বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত নিহার বানু হত্যা মামলায় তিনি বিবাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি একাধিকবার রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি রাজশাহীর আদালতে আইন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। পরে রাজধানী ঢাকায় চলে যান। তাই তার মরদেহ আনা হয়েছিল রাজশাহীতে।

ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপুর মেয়ে ডানা নাজনীন জানান, তার বাবার মরদেহ রাজধানী ঢাকার মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানেই দাফন করা হবে। তবে এর আগে পরিবারের শেষ ইচ্ছানুযায়ী রাজশাহীর মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার বাবার মরদেহ আজ এখানে নিয়ে আনা হয়েছে।

বেলা সাড়ে ১১টায় প্রথমে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সালিম উদ্দিন আহমেদ শিমুল, ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি, রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এরপর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আনার পর শনিবার বেলা পৌনে ১২টায় তার জানাজার নামাজ পড়ানো হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপুর মরদেহ নিজ জন্মস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী কলেজে এসে পৌঁছায়।

জানাজার নামাজের আগে বক্তব্য দেন- রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপুর ছোট মেয়ে ডানা নাজনীন।

সিটি মেয়র বলেন, ‘গোলাম আরিফ টিপু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাষা আন্দোলন করেছেন, রাজশাহীতে দেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে দিনের পর দিন অবিচল থেকে সাহসিকতার সাথে কাজ করে গেছেন। তিনি শুধু রাজশাহীর নয়, সারাদেশের সম্পদ। তার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তাকে অনুসরণ করতে পারলে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।’

এর আগে শনিবার সকাল পৌনে ৯টায় গোলাম আরিফ টিপুর জন্মস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রানীহাটি ঈদগাহ মাঠে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন ও পুলিশ সুপার মো. ছায়দুল হাসান তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

দেশের প্রথিতযশা এই আইনজীবী গতকাল শুক্রবার (১৫ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে রাজধানী ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

 

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top