রামেক হাসপাতালে অনিয়ম বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চলছে নানারকম অনিয়ম আর দুর্নীতি। অব্যবস্থাপনায় ভেঙ্গে পড়েছে চিকিৎসা সেবা। বেশিরভাগ চিকিৎসকই এখানে ঠিকমতো রোগীদের সেবা দেন না। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে তারা ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট প্র্যাকটিসে। সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের এক স্মারকলিপিতে এমন কথায় বলা হয়েছে। সোমবার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে দেয়া হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. কামরুজ্জামান স্বারকলিপি গ্রহণ করেন। এ সময় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. লিয়াকত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মিনহাজ উদ্দিন মিন্টু, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, সমাজসেবক ইমাম ইয়াহিয়া ফেরদৌস, নারীনেত্রী সেলিনা বেগম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুফিয়া বেগম, কেএম জোবায়েদ, জাহিদ বাবু, আল-আমিন, আতাউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনে ফাঁকি এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে এসবের সমাধান চাওয়া হয়েছে। সমাধান না হলে রাজশাহীর মানুষকে নিয়ে রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটির স্মারকলিপিতে হয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক চিকিৎসক সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত রোগী দেখতে ওয়ার্ডে যান না। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দিয়েই রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। এতে রোগীদের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। অনেক সময় বিনাচিকিৎসায় তাদের প্রাণ হারাতে হয়।
হাসপাতালে কর্তব্যরত অধিকাংশ চিকিৎসক সরকারী নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যত্রতত্র প্রাইভেট প্রাকটিসে ব্যস্ত রয়েছেন। তারা হাসপাতালে যান কেবল হাজিরা খাতায় সই করতে। চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্রাকটিসের কারণে নগরীতে ব্যাঙের ছাতার মত ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠছে। কমিশনের বিনিময়ে হাসপাতালের কতিপয় ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে মোটা অংকের টাকা পাচ্ছেন।
এদিকে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ স্মারকলিপিতে আরও বলেছে, রামেক হাসপাতালে মুমুর্ষ রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা আছে। তবে জটিল রোগীদের বিবেচনায় এটা সংখ্যায় খুবই নগণ্য। আইসিইউ শয্যা বৃদ্ধি করা জরুরি। এছাড়া বার্ণ ইউনিটেও আইসিইউ শয্যা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে পরিষদ। তারা বলেছে, তীব্র শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয় উত্তরাঞ্চলের মানুষ। তারা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে। এদের জন্য আইসিইউ শয্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
এছাড়া হাসপাতাল ঘিরে দালালচক্র ও অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কথাও স্মারকলিপিতে তুলে ধরা হয়েছে। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে এখন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিটিভদের দৈরাত্ব বেড়েছে। তারা চিকিৎসকদের প্রভাবিত করে মানহীন ওষুধ লিখে দেয়াচ্ছেন। এতে ওষুধে রোগীর তো কোন কাজই হচ্ছে না; বরং তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে এখন রোগী মারা গেলে তার মরদেহ হাসপাতাল থেকে বের করতে দালাল চক্রের হাতে অনেক জায়গায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স মরদেহসহ তাদের স্বজনদের জিম্মি করে। স্বজনহারা ব্যক্তিদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই চক্রটি দীর্ঘদিন হাসপাতালে অমানবিক আচরণ করে আসছে। তাই এদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানানো হয়। এছাড়া নগরীর পাড়া-মহল্লায় অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকগুলোর প্রতারণার ব্যাপারেও কঠোর নজরদারির দাবি জানানো হয়।
রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ বলেছে, বর্তমান সরকারের ইতিবাচক নানা পদক্ষেপের কারণে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন হয়েছে। করোনাকালেও সরকার পরিস্থিতি ভালভাবেই সামাল দিয়েছে। কিন্তু রামেক হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসকদের বাণিজ্যিক মনোভাব সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তাই এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
আরপি/ এসআই-৭
বিষয়: রামেক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইন্টার্ন চিকিৎসক
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: