রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর তিন পৌরসভায় তিনটিতে আ.লীগ জয়ী, একটিতে সতন্ত্র


প্রকাশিত:
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:৪২

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৩৩

ছবি: সংগৃহীত

চতুর্থ ধাপে রাজশাহীর চারটি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। আর অন্য একটিতে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী।

রোববার রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, পবার নওহাটা এবং বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ভোটগণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য তিন পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নওহাটায় নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, তাহেরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ১০ হাজার ৮৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে বিএনপির প্রার্থী আবু নঈম মো. সামসুর রহমান মিন্টু ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৯০৩ ভোট। আবুল কালাম আজাদ টানা তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হলেন। তার স্ত্রী খন্দকার শায়লা পারভীনও এই পৌরসভার মেয়র ছিলেন।

তানোর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ইমরুল হক ১২ হাজার ৬৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর ধানের শীষের প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান পেয়েছেন ৭ হাজার ২১৭ ভোট। বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মালেক মণ্ডল নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৪৫ ভোট। মিজানুর রহমান মিজান পৌরসভার বর্তমান মেয়র। প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পর এই প্রথম তানোর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের কোন নেতা মেয়র হলেন।

এদিকে গোদাগাড়ী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাসের ভরাডুবি ঘটেছে। এখানে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মনিরুল ইসলাম বাবু। তিনি পৌরসভার বর্তমান মেয়রও। দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। আর এতেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হয়ে গেলেন তিনি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, মনিরুল ইসলাম বাবু ভোট পেয়েছেন ৮ হাজার ৮১৫টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া রুলু তার ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৬ হাজার ৭৯৩ ভোট। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ১৪ ভোট। ভোটে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা ড. ওবায়দুল্লাহ জগ প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৭৪ ভোট।

এদিকে নানা নাটকীয়তার নওহাটা পৌরসভায় পর মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাফিজুর রহমান হাফিজকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম প্রামানিক রাতে এই ফল ঘোষণা করেন। তিনি জানান, পৌর যুবলীগের সভাপতি হাফিজ তার নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪৫১টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল বারী খান তার নারিকেল গাছ প্রতীকে পেয়েছেন ১৩ হাজার ৭৮৬ ভোট। আর বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র মোকবুল হোসেন তার ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৭ হাজার ২৭৯ ভোট। ৬৬৫ ভোটে হাফিজের কাছে পরাজিত হওয়া আবদুল বারী খান পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে প্রথমবারের মতো মেয়র হলেন হাফিজুর রহমান হাফিজ।

এর আগে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ করা হয়। রাজশাহীর চারটি পৌরসভার মধ্যে শুধু গোদাগাড়ীতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়। অন্য তিনটিতে ভোটগ্রহণ করা হয় ব্যালটে। তিনটি পৌরসভায় ভোটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখা গেছে। ভোটাররা স্বচ্ছন্দ্যে ভোট দিয়েছেন। নওহাটা পৌর এলাকায় গোলযোগ দেখা গেছে। এখানে ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে তাহেরপুরে ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ দেখা গেলেও বেলা শেষে ভোটবর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপি প্রার্থী আবু নঈম সামসুর রহমান ওরফে মিন্টু। ভোটে সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার অভিযোগ তুলে বেলা পৌনে তিনটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। তবে তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। শেষ সময়ে ভোট বর্জনের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগেই বর্জন করেছেন, তবে শেষ সময়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মাত্র।

তাহেরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের হাতে হাতে ফুল তুলে দিয়েছেন। ভোটাররা যখন ভোট দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হচ্ছিলেন তখন কালাম সামনে যাকে পেয়েছেন তার হাতেই ফুল দিয়েছেন। বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে তিনি এই ফুল দেন। তাহেরপুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট হয়েছে। একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে প্রথমে নিজের স্ত্রীকে ফুল দিয়ে তিনি এ কার্যক্রম শুরু করেন।

তাহেরপুরে ভোটের মাঝেও ভালোবাসার এমন আমেজ দেখা গেলেও নওহাটা পৌরসভার ভোটে বিচ্ছিন্ন নানা ঘটনা ঘটেছে। সকালে বাগধানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করতে যান ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর এই সমর্থকেরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং সেখানে পরপর তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটনা। তখন অন্য প্রার্থীর সমর্থক এবং স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া দেন। এর ভেতরে পড়ে ইটের আঘাতে আহত হন বাংলাভিশনের রাজশাহীর ক্যামেরাপার্সন জসিম উদ্দিন। দুপক্ষের আরও কয়েকজন আহত হন। বাধ্য হয়ে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে আধাঘণ্টা পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

দুপুরের পর নওহাটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার সেজে জাল ভোট দিতে যান ছাত্রলীগের কর্মীরা। ওই কেন্দ্র থেকে জাল ভোট দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। নওহাটা মডেল হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের বুথের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তারা ভোটারদের তাদের সামনেই নৌকায় ভোট দেয়াচ্ছিলেন। মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের কেন্দ্রের ভেতরে থাকলেও তাদের চুপচাপ বসে থাকতে দেখা গেছে। রাজশাহীর চারটি পৌরসভার মধ্যে তিনটির ফলাফলই ঘোষণা করা হয়েছে সন্ধ্যার পর। তবে নানা নাটকীয়তার পর নওহাটার ফল ঘোষণা করা হয়েছে রাত ১০টার পর। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল বারী খান অভিযোগ করেছেন, কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল ঘোষণা না করে উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে ফলাফল বদলে দেয়া হয়েছে। তিনি এই ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে অভিযোগ করবেন।

আরপি/ এসআই-৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top