রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

অতিথি পাখির বাসা ভাড়া ৩ লাখ টাকা


প্রকাশিত:
২২ নভেম্বর ২০২০ ২৩:৩২

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৯:৩৮

ছবি: সংগৃহীত

শামুকখোল পাখির বাসার জন্য রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আম বাগান মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোট পাঁচ বাগান মালিক পাখির বাসার জন্য তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা ইজারা বাবদ অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন।

বরাদ্দ পাওয়া অর্থ বাগান মালিক খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের মঞ্জুর রহমান মুকুল, সানার উদ্দিন, সাহাদত হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও ফারুক আনোয়ার পাবেন।

কয়েক বছর থেকে অতিথি শামুকখোল পাখি আসায় আম বাগানের ক্ষতি হওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানে শামুকখোল পাখির বাসার জন্য আমচাষিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই বরাদ্দ দেয়।

শনিবার (২১ নভেম্বর) সকালে এই আমবাগান পরিদর্শন করে পাখির অবস্থা দেখতে আসেন বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল ঢাকার বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে, রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) জিল্লুর রহমান, রাজশাহী সামাজিক বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক মেহেদী হাসান, বন্যপ্রাণি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাহাত হোসেন, ওয়াইল্ড লাইফ রেঞ্জার হেলিম রায়হান ও বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবীর।

এ সময় তারা বাগান মালিক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কর্মকর্তারা জানান, অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে আমবাগানের মালিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে টাকা দেওয়া হবে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা গত বছর বাগানে গিয়ে জরিপ করে ৩৮টি আমগাছে পাখিরা বাসা দেখতে পাই। পরে গাছগুলোর আমের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার ব্যয় নিরূপণ করা হয়। গাছের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হতে পারে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান আরও জানান, স্থায়ীভাবে পাখিদের অভয়ারণ্য করতে হলে তার জন্য অন্তত ১০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ৩৮টি আমগাছের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এর জন্য দুই কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। দুই ধরনের প্রস্তাবই কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার থেকে বরাদ্দ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বেশ কয়েক বছর ধরে বর্ষার শেষে শামুকখোল পাখি বাচ্চা ফোটানোর আগে খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানে বাসা বাঁধতে শুরু করে। গত বছর (২০১৯) অক্টোবরের শেষে পাখিরা বাচ্চা ফুটিয়েছিল, কিন্তু বাচ্চা উড়তে শিখেনি-এই অবস্থায় আমবাগানের ইজারাদার বাগানের পরিচর্যা করতে চান। তিনি বাসা ভেঙে আমগাছ খালি করতে চান। একটি গাছের কিছু বাসা ভেঙেও দেন। স্থানীয় পাখিপ্রেমি কিছু মানুষ তাকে বাসা না ভাঙার জন্য অনুরোধ করেন। অন্তত যতদিন বাচ্চারা উড়তে না শেখে। তাদের অনুরোধে তিনি পাখিদের বাসা ছাড়ার জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন। ১৫ দিনের মধ্যে বাসা না ছাড়লে পাখিদের বাসা ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন। ওই দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ায় বিষয়টি আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার আরজি জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায়। পরে আদালত রুলসহ এক আদেশে কেন ওই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান। ঘোষিত আদেশে এলাকাটি অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলে বাগান মালিক ও বাগানের ইজারাদারের ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ নিরূপণ করে ৪০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতানকে আহ্বায়ক করে ও বনবিভাগ সহকারী বনসংরক্ষক মেহেদী হাসানকে আহ্বায়ক করে অপর একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা পাখির বাসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮টি আমগাছ চিহ্নিত করে। তারা তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেন।

 

আরপি/ এমআই 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top