রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

‘জামানত’ দিয়েও চাকরি পেলো না প্রতিবন্ধী যুবক রইচ


প্রকাশিত:
৯ নভেম্বর ২০২০ ২১:২৭

আপডেট:
৯ নভেম্বর ২০২০ ২১:৩৫

ফাইল ছবি

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার পুরান তাহিরপুর উচ্চবিদ্যালয়ে নৈশ্যপ্রহরী পদে নিয়োগ পেতে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা ‘জামানত’ দিয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবক রইচ উদ্দিন (২৮)। কিন্তু তার চাকরি হয়নি। জামানতের টাকাও ফেরত পাননি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি।

রাজশাহীর সহকারী জজ আদালতে গত বৃহস্পতিবার মামলাটি দায়ের করেন তিনি। এতে পুরান তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রধান শিক্ষকসহ ১২ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী সরদার স্কুলের প্যাডে দেয়া একটি অঙ্গীকার নামায় ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ রইচের কাছ থেকে নগদ তিন লাখ ২০ হাজার টাকা নেন। অঙ্গীকারনামায় লেখা আছে, ‘রইচের কাছ থেকে ‘জামানত স্বরুপ’ তিন লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়া হলো। তার চাকরি স্থায়ী করা না হলে সম্পূর্ণ টাকা একসঙ্গে নগদে ফেরত দেয়া হবে।’

জানা গেছে, পুরান তাহিরপুর গ্রামেই প্রতিবন্ধী রইচ উদ্দিনের বাড়ি। তার বাবাও পুরান তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ্যপ্রহরী ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর ২০১৬ সালে সেই পদে তাকে অস্থায়ীভাবে চাকরিতে নেয়া হয়েছিল। গেল বছর চাকরি স্থায়ী করে দেয়ার নামে তার কাছ থেকে ঘুষ নেন প্রধান শিক্ষক। এরপর আসে স্কুলের নতুন ম্যানেজিং কমিটি। এই কমিটি রইচের চাকরির জন্য আরও সাত লাখ টাকা দাবি করে। রইচ টাকা দিতে না পারায় অস্থায়ী চাকরি থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়। এখন অন্য প্রার্থীকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

এ নিয়োগের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন রইচ উদ্দিন। স্কুল ছাড়াও মামলার অন্য বিবাদীরা হলেন- প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী সরদার, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আহম্মদ আলী প্রামানিক, সদস্য মোকছেদ আলী মৃধা, মতিউর রহমান, মো. মোশারফ, রফিকুল ইসলাম, শরিফ মণ্ডল, মোসা. মুন্নি, শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য ইদ্রিস আলী, রহিদুল ইসলাম ও কানিজ ফাতিমা।

এদিকে ম্যানেজিং কমিটি জালিয়াতি করে অবৈধ নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলেও অভিযোগ রইচ উদ্দিনের। এ নিয়ে তিনি গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি বলেছেন, ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন দেয়। এতে অভিভাবক সদস্য পদে মোছা. মুন্নি নামের এক নারীর নাম রয়েছে। কিন্তু কমিটি অনুমোদনের পরের মাসেই স্কুলের নিয়োগ নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির যে সভা অনুষ্ঠিত হয় তার রেজুলেশনে হেলাল উদ্দীন নামে এক ব্যক্তির বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ বোর্ডের অনুমোদিত কমিটিতে তার নাম নেই। আবার বোর্ডের অনুমোদন দেয়া মুন্নির নাম এই সভার রেজুলেশনে নেই। এছাড়া ব্যাংকের হিসাব পরিচালনার জন্য ব্যাংকে যে তালিকা দেয়া হয়েছে সেখানে মুন্নির নাম রয়েছে। আর নামের তিন নম্বর ক্রমিকে অন্য একটি নাম কেটে সেখানে হেলাল উদ্দিনের নাম বসানো হয়েছে। এভাবে কমিটি জালিয়াতি করে স্কুলটি নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ব্যাংক হিসাবও পরিচালনা করছে। তিনি এ বিষয়টিরও তদন্ত চেয়েছেন

আর মামলার আর্জিতে রইচ উদ্দিন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্কুলটিতে নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আহাম্মদ আলী বলেন, রইচের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়ে কিছু জানি না। তিনি মামলা করেছেন, সেই মামলা আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে।


আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top