রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

আসছে শীত, চারঘাটে চলছে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি


প্রকাশিত:
২৮ অক্টোবর ২০২০ ০১:৩৭

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ১৩:৫৮

রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। ছবি: প্রতিনিধি

ঋতু বৈচিত্র্যে এখন রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা খেজুরগাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

আর মাত্র কয়েকদিন পর রস সংগ্রহ করে রস থেকে লালি ও গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি উপজেলার প্রতিটি গ্রামে চোখে পড়ছে। খেজুর রস ও গুড়ের জন্য চারঘাট উপজেলার এক সময় খ্যাতি ছিল। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়।

কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলে, ঝোপ-ঝাড়ের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুরগাছ। কোনো পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃৃতিকভাবে বেড়ে উঠতো এসব খেজুরগাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু খেজুরের গুড়।

গ্রামীণ জনপদে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে পুকুরের পাড়ে রাস্তার ধারে পরিবেশবান্ধব খেজুরগাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ইট ভাটার রাহুগ্রাসে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণে যে পরিমাণ গাছ চোখে পড়ে তা নির্বিচারে নিধন করায় দিনদিন খেজুরগাছ কমছেই। এখনো শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসে গ্রামবাংলার খেজুর রস খেতে।

এক সময় সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীণ পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করতেন। যার সাধ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন অবশ্যই সে কথা নতুন প্রজন্মের কাছে রূপকথা মনে হলেও বাস্তব।

যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুরগাছ। এ গাছ ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। এছাড়া খেজুর পাতা দিয়ে আর্কষণীয় ও মজবুত পাটি তৈরি হয়। এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যাপক ব্যবহার। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনসহ বনবিভাগের নজরদারি না থাকায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরগাছ এখন উপজেলাজুড়ে বিলুপ্তির পথে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক গাছিই খেজুরের গাছ ঝুড়ছেন। এ সময় কথা হয় শলুয়া ইউনিয়নের আব্দুল হামিদ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, আগাম রস নামাতে পারলে বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়া যাবে। ৪০ বছর ধরে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে আসছি। বর্তমানে রস, গুড় ও পাতালির দামও ভালো। বর্তমান বাজারে আখের গুড় চিনি যে মূল্যে বেচাকেনা হচ্ছে তার চেয়ে মানসম্পন্ন খেজুরের গুড়ের দাম এবছর কিছুটা বেশি হবে এমনটাই আসা করছেন গাছিরা। শীত একটু বেশি পড়তে শুরু করলে আত্মীয়-স্বজন আনা নেয়া ও পিঠা-পুলির উৎসবে খেজুর গুড়ের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সে সময় আমাদের লাভ একটু বেশি হয়।

নিমপাড়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের মাজেদুল ইসলাম বলেন, একটি খেজুর গাছ ঝুড়তে আমরা ৩০ টাকা করে পেয়ে থাকি। প্রতিদিন ১০-১৫টি খেজুর গাছ ঝুড়া যায়। যা থেকে ৬-৭শ টাকা আয় হয়। কার্তিক মাসের শুরু থেকেই গাছ ঝুড়া শুরু হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুরগাছের সংখ্যা কমছে। গাছিদের খেজুরগাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বুক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য ও অপেক্ষার পালা। এ জন্য মৌসুমে আসার সাথে সাথে দক্ষ গাছিদের কদর বাড়ে। এ বছর রস সংগ্রহকারীরা লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এদিকে উপজেলার সচেতন মহল মনে করেন, খেজুরগাছ আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য তথা জীবনধারায় মিশে আছে। এই ঐতিহ্যকে যেকোনো মূল্যে আমাদের রক্ষা করতে হবে।

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top