রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

সরদহ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র

নেই ডাক্তার, নেই ওষুধ, শুধু মাদকসেবীদের আড্ডাখানা


প্রকাশিত:
১৬ জুলাই ২০২০ ০১:১৩

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ০৬:৫৩

ছবি: তালাবদ্ধ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পুরাতন ভবনে চলছে মাদক সেবন (ইনসেটে)

জনবল সংকট ও তদারকির অভাবে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার একমাত্র উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। নামে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সেবার কোন বালাই নেই। মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।

নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার থাকলেও কখনোই তাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখা যায় না। বিভিন্ন পদে জনবল না থাকায় গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ গ্রামীণ শিশু, নারী ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।

জানা যায়, চারঘাট উপজেলার একমাত্র উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র চারঘাট পৌরসভার সরদহতে অবস্থিত। এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক জন মেডিক্যাল অফিসার, মিডওয়াইফ, উপসহকারী মেডিক্যাল কর্মকর্তা, ফার্মাসিস্ট, অফিস সহায়কসহ ৬টি পদ রয়েছে। এরমধ্যে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্ম সম্পাদনা করেন। একজন ফার্মাসিস্ট থাকলেও তিনি ১৫ বছর যাবৎ রামেকে পেশনে রয়েছেন। এছাড়া অনেকগুলো পদ খালি রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারঘাট উপজেলার একমাত্র উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র তালাবদ্ধ। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। জরুরী প্রয়োজনে নিয়ে যেতে হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। জনবল না থাকায় এবং নিয়মিত তদারকির অভাবে ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। পুরাতন ভবনে দিনের বেলা চলছে মাদক সেবন।

উপজেলার আস্করপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সখিনা বেগম বলেন, আমার নাতনির পেট ব্যাথা,জ্বর এসেছিলাম ওষুধ নেওয়ার জন্য। এখানে ওষধও নেই, ডাক্তারও নেই তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

গৌড়শহরপুর এলাকার বজলুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। শুধুমাত্র একজন উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা রয়েছেন, যিনি মাঝে মধ্যে আসেন এবং ঘণ্টা দুয়েক পরে আবার চলে যান। তাই জরুরী প্রয়োজনে গুরুতর রোগীরা বাড়ির কাছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকা সত্বেও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ডাক্তার নেই, ওষুধও নেই, অন্যান্য পদে লোকও নেই। সঠিকভাবে দেখভাল না করায় কেন্দ্রেটি ঝোপঝাড় ও মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে।

উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা মাইমুনা খাতুনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে হলে বলেন, আমি ছাড়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আর কেউ নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন ফার্মাসিস্ট দিলেও সে গত ১৫ দিন যাবৎ আসেনা। সব সময়ই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতরে মাদকসেবীদের আড্ডা চলে। মাদকসেবীদের বিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনা।

তিনি বলেন, আমি একজন মেয়ে হয়ে সব সময়ই এখানে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগি। প্রায় দিন সকালে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসলে মাদকসেবীদের সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবেই আমি তালা লাগিয়ে বাড়িতে এসেছি।

উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়োগপ্রাপ্ত ডা. শংকর বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্যারের নির্দেশনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কার্যসম্পাদন করে আসছি।

চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আশিকুর রহমান বলেন, যথা সময়ের আগেই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তালা লাগিয়ে বাড়ি যাবার কারণে উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা মাইমুনা খাতুনকে তাৎক্ষণিক অফিশিয়াল ভাবে শোকজ করা হয়েছে। আর অফিস সময়ের পরে মাদকসেবীদের আড্ডা হয়,এটা সঠিক। এ বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগীতায় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

আরপি/আআ-১৩



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top