রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ১৬ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চারঘাটে জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্রুট ব্যাগিং, গাছে গাছে ঝুলছে বিষমুক্ত আম


প্রকাশিত:
২৮ জুন ২০২০ ০৩:৩৯

আপডেট:
২৮ জুন ২০২০ ০৩:৪১

গাছে গাছে ঝুলছে বিষমুক্ত আম

আমগাছে বাবুই পাখির বাসা! অবাক কান্ড বলে ভ্রম হতেই পারে যারা প্রথমবার রাজশাহীর চারঘাট আমকুঞ্জে এসেছেন তাদের কাছে। গাছে গাছে দু’চারটা নয় হাজার হাজার ব্যাগ ঝুলছে। এগুলো হলো ফ্রুট ব্যাগিং।

রাজশাহী চারঘাট উপজেলার বাঁকড়া গ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দীন। এবার তাঁর ১৫ বিঘা জমির বাগানে রয়েছে ফজলি এবং আশ্বিনা জাতের আম। প্রতিটি আম বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগে মোড়ানো।

জানা গেছে, সারাদেশেই আম উৎপাদনকারী উপজেলা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে রাজশাহীর চারঘাটের। এক সময় কীটনাশক ছাড়া গ্রীষ্মকালীন ফল উৎপাদনের চিন্তা করতে পারতেন না মৌসুমী চাষীরা।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রথাগত পরিবর্তন এসেছে ফল উৎপাদনে। উৎপাদিত ফল রপ্তানির চিন্তা মাথায় রেখে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিষমুক্ত ও নিরাপদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে চিরাচরিত কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে চাষীরা বেছে নিচ্ছেন ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি।

গত কয়েক বছর ধরে উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক পরামর্শ ও তত্ত্বাবধায়নে উপজেলা জুড়ে শুরু হয় ফলের ব্যাগিং প্রযুক্তির ব্যবহার। এরপর থেকে এ পদ্ধতিতে আম চাষ করা হয়। কীটনাশকের বিরুদ্ধে মানবদেহ ও পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় জনপ্রিয় হচ্ছে দিন দিন।

চাষী জসিম উদ্দীনের বাগান ঘুরে সরেজমিন দেখা যায়, বাবুই পাখির বাসার মতো গাছে গাছে বাদামী রং এর কাগজের ব্যাগ ঝুলছে। প্রতিটি গাছের আম কাগজের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে।

তিনি নিরাপদ আম সংরক্ষণের ফ্রুট ব্যাগ প্রযুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে মজা করে বলেন, পোশাক পরেছে তাঁর বাগানের আম। এক-একটা ব্যাগ খুলে দেখান। সতেজ সবুজ ও পরিষ্কার আম। আমের গায়ে দাগ নেই। ধুলা ও পোকামাকড় নেই। নেই রোগবালাই।

জসিম উদ্দীন আরো বলেন, ‘গত বছরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে বিভিন্ন জাতের আম ফ্রুট ব্যাগিং করে বেশ সফলতা পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতায় এবছর ১৫ বিঘা জমিতে ফজলি ও আশ্বিনা জাতের আম ফ্রুট ব্যাগিং করছি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করায় আম বাগানে বর্তমানে আমাকে কোনো বাড়তি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম চাহিদা বেশি থাকায় দেশ ও দেশের বাহিরে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে। এ বছর করোনার কারনে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সামনে এ প্রক্রিয়ায় অব্যহত রাখা হবে।

তাঁর দাবী, আমগুলি ব্যাগের ভিতরে থাকায় কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। এই পদ্ধতিতে আম নষ্টও কম হয় এবং উৎপাদিত আম ফলনও বৃদ্ধি পায়। স্বল্প খরচে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির মাধ্যমে মানসম্পন্ন আম উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রত্যাশা করেন তিনি। তার মতো এখন উপজেলার বেশ কিছু আমচাষী ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ করছেন।

নিরাপদ আম উৎপাদনে উপজেলার চারঘাট ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন, আব্দুল মালেকসহ বেশ কিছু আমচাষী এবার আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন।

চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনজুর রহমান বলেন, উপজেলায় দিন দিন এ পদ্ধতিতে আম চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই পদ্ধতির ফলে মাছিপোকা আম নষ্ট করতে পারে না। তাছাড়া আম দেখতে সুন্দর এবং ফলনও বৃদ্ধি পায়।

বিষমুক্ত নিরাপদ ফল উৎপাদনে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির প্রসার ঘটাতে উপজেলা কৃষি বিভাগ হতে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

আরপি/এএন-৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top