রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১

সেই বাগানে আবারো পাখিদের আগমন


প্রকাশিত:
১৫ জুন ২০২০ ০১:৫৩

আপডেট:
১৫ জুন ২০২০ ০১:৫৫

ছবি: বাঘার সেই বাগানে আবারো অতিথি পাখিদের আগমন

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের সেই আম বাগানে আবারও আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। প্রজননের প্রয়োজনে ফিরছে পাখিরা।

কিন্তু আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও তাদের স্থায়ী আবাসন গড়ার ব্যবস্থা হয়নি। অনেক জল্পনা কল্পনার পরেও বাগান মালিকেরাও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ক্ষতিপূরণ পায়নি। তাই এবার তাঁরা চিন্তায় পড়েছে, পাখিকে উড়িয়ে দেবেন, নাকি থাকতে দেবেন। এরই মধ্যে বাগানের আম পাড়া নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তারা।

গত বছর ২৯ অক্টোবর পাখিদের বাসা ছাড়ার বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার আরজি জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায়।

আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এক আদেশ দেন। কেন ওই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। এলাকাটি অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলে বাগান মালিক ও বাগানের ইজারাদারের ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ নিরূপণ করে ৪০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে পাখিদের স্থায়ী আবাস গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। এ জন্য জমি অধিগ্রহণ ও গাছের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এ বছর আবার পাখিরা দুটি গাছে এসে বসেছে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা বাসা তৈরির প্রস্তুতি নেবে। এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন আম গাছের মালিকেরা।

স্থানীয় আমচাষি মনজুর রহমান জানান, তিনি একজন মালিকের অনেকগুলো আমগাছ পরিচর্যা করেন। গত বছর পাখি বসার কারণে ৭টি গাছে কোনো আম হয়নি। এবারও পাখি এসে বসতে শুরু করেছে। পাখি বসার কারণে কোনো ব্যাপারী আমের দাম বলছেন না। এ নিয়ে তাঁরা চিন্তায় রয়েছি। গত বছর যে ক্ষতি হয়েছে, তাঁরা এবার আরও বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা গত বছর বাগানে গিয়ে জরিপ করে ৩৮টি আমগাছে পাখিরা বাসা বেঁধেছিল। তাঁরা এই গাছগুলোর আমের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার ব্যয় নিরূপণ করা হয়। গাছের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হতে পারে।

আরও বলেন, স্থায়ীভাবে পাখিদের অভয়ারণ্য করতে হলে তার জন্য অন্তত ১০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ৩৮টি আমগাছের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এর জন্য দুই কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। দুই ধরনের প্রস্তাবই কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার থেকে বরাদ্দ পেলে তাঁরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

তিনি বলেন, এবার খেয়াল করেছেন ১ জুন থেকেই পাখি আসছে। দুটি গাছে বসেছে। একটি গাছে এবার কোনো আম আসেনি। গতবার প্রচুর পাখি বসার কারণে ওই গাছের কোনো পাতা ছিল না। আরেকটি ফজলি আমের গাছ। আম আছে। কিছু ক্ষতি হবে। তাঁরা (বাগানমালিক/ইজারাদার) আম পাড়তে পারবেন।

কয়েক বছর ধরে এই বাগানে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধে বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চা উড়তে শিখলে তারা চলে যায়। গত বছর অক্টোবরের শেষের দিকে আমবাগানের ইজারাদার বাগানের পরিচর্যার জন্য পাখি উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সে সময় স্থানীয় পাখিপ্রেমীরা বাচ্চাদের উড়তে শেখার জন্য আমবাগানের ইজারাদার কাছে থেকে পাখির জন্য ১৫ দিন সময় চেয়েছিলেন।

 

আরপি/আআ-১৮



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top