ফোনে মিসড কল আসায় স্ত্রীকে গাছে বেঁধে গরম লোহার ছ্যাঁকা
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর সদরের শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামে মোবাইল ফোনে মিসড কল আসায় স্ত্রী খাদিজা খাতুনকে (২০) গাছে বেঁধে লোহার নিড়ানি গরম করে ছ্যাঁকা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।
এ সময় ওই গৃহবধূর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বামী সাকিল হোসেন (২৪) ও ভাসুর আসলাম হোসেনকে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা ওই গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে।
পুলিশ ও গৃহবধূর বাবার দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৬ মে সাকিল হোসেনের সঙ্গে খাদিজা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর বিভিন্ন অজুহাতে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করত সাকিল। তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকত।
এরই ধারাবাহিকতায় মোবাইলে মিসড কল আসার অপরাধে স্বামী শাকিল, তার বড়ভাই আসলাম, শ্বশুর আব্দুস সালাম (৫৮) ও শাশুড়ি সেলিনা বেগম (৫০) মিলে খাদিজাকে দড়ি দিয়ে বাড়ির ভেতরের লিচু গাছে বেঁধে হাত, পা, মুখমন্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম লোহার ছ্যাঁকা দেয়।
এক সময় মাথায় আঘাত করলে তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলেও বাড়ির দরজা বন্ধ থাকায় তারা প্রবেশ করতে পারেনি। পরে মেয়েটির চিৎকার সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে প্রতিবেশীরা দরজা ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ করেন এবং মেয়েটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
নির্মম নির্যাতনের শিকার খাদিজা খাতুন বলেন, আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করে। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে সহ্য করতে পারছিলেন না। আমার স্বামী ভালোয় ছিল। শ্বশুর-শাশুড়ির কারণে সে বিভিন্ন সময় আমাকে মারধর করত।
দাবিকৃত যৌতুকের টাকা পরিশোধও করা হয়েছে। বুধবার রাতে বাড়িতে ফিরে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার উপর এই নির্যাতন চালায়। ওই গৃহবধূ আরও বলেন, স্বামী আমাকে নির্যাতন করেছে। তবুও আমি স্বামীর সংসার করতে চাই। এ কারণে মা-বাবাকে ঘটনাটি জানাইনি।
সাবেক ওর্য়াড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বলেন, গৃহবধূকে তার স্বামী প্রায় নির্যাতন করত বলে শুনেছি।আক্কেলপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, গৃহবধুর দুই গালে, দুই হাতে ও পায়ে ছ্যাঁকা দেওয়ার চিহ্ন রয়েছে। তার পরিবার মেয়েটিকে রেফার্ড করে নওগাঁ জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
আক্কেলপুর থানার ওসি আবু ওবায়েদ জানান, এ ঘটনায় গৃহবধূর বাবা আইয়ুব আলী তার জামাইসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে। মামলা পাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে পুলিশ গৃহবধূর স্বামী ও ভাসুরকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি।
আরপি / এমবি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: