রাজশাহী রবিবার, ১২ই মে ২০২৪, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩১

নেসকো’র ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে পিষ্ঠ নগরবাসী


প্রকাশিত:
২০ মে ২০২০ ০৫:১৮

আপডেট:
১২ মে ২০২৪ ১৪:০৩

গ্রাহকের অস্বাভাবিক বিলের কপি

রাজশাহী মহানগরীর একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘শিক্ষা স্কুল এ্যান্ড কলেজ’। মার্চ মাসে ১৬ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ছুটিতে চলে যায় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এর বিদ্যুৎ বিল সংশ্লিষ্টদের চমকে দিয়েছে।

গত এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৬৬ হাজার ৩৫ টাকা। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যুৎ বিল ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজারের মধ্যে ওঠানামা করে। এছাড়াও গত ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ৩০০ টাকা ও মার্চ মাসে ৫ হাজার ২০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। অথচ পরবর্তী মাসেই বিদ্যুতের ব্যবহার না করেও আকাশচুম্বী বিল করা হয়েছে।

শুধু এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, নগরীর বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের এমন অস্বাভাবিক ভূতুড়ে বিল করেছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানীর (নেসকো)। নেসকো’র এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটার রিডিং না দেখে অফিসে বসেই মনগড়া বিদ্যুতের বিল করায় এমন বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এর সত্যতা স্বীকারও করেছেন নেসকো’র কর্মচারীরা। আর এতে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

গ্রাহকরা একের পর অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। বিদ্যুতের ব্যবহার না করেও গ্রাহকদের কারও বিল কয়েকগুন, আবার কারও বিল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক অনেক কম এসেছে। নেসকো কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রিন্ট মিসটেকের কারণে এমন ভুল হয়েছে।

নেসকো অফিসের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, রাজশাহীতে নেসকোর অধিনে প্রায় ২ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে অনেক গ্রাহক এপ্রিল মাসের বিল বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। অধিকাংশ গ্রাহকেরই বিদ্যুতের বিল বেশি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল দেয়া হলেও মিটার রিডিং দেখা হয়নি। অফিসে বসে মনগড়াভাবে তৈরি করা বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকরা পেয়েছেন। এতে দেখা গেছে মার্চ মাসে যে গ্রাহকের ১ হাজার টাকা বিল এসেছে, এপ্রিল মাসে তা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে হয়েছে তার উল্টো।

এমনই ঘটনা ঘটেছে নগরীর তালাইমারী এলাকার গ্রীণ ফিল্ড স্কুলের পরিচালক ইমদাদুল হকের ক্ষেত্রে। তিনি যে বাসায় ভাড়া থাকেন, সেই বাসার দুইটি মিটারের বিলে এসেছে ২৭ ও ২৯ টাকা। এমন কম বিল পেয়ে খুব দ্রুতই পরিশোধ করেছেন তারা।

এছাড়াও নগরীর ষষ্টিতলা মসজিদের সামনের বাড়ির মালিক জাহিদ হোসেনের বাড়িতে গত মার্চ মাসে বিদ্যুৎ বিল করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এপ্রিল মাসের বিল দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। তিনি ওই বাড়িটি ছাত্রাবাস হিসাবে ব্যবহার করেন। মার্চ মাসের আগেই শিক্ষার্থীরা চলে গেছেন। যার কারণে সন্ধ্যার লাইটটিও জ্বলে না তার বাসায়। তারপরও এই বিল দেখে তিনি হতবাক।

নগরীর শিক্ষাস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ইব্রাহীম হোসেন জানান, নেসকোর বিদ্যুৎ বিলের উপর লেখা রয়েছে ‘দেশ প্রেমে শপথ নিন, দুর্নীতিকে বিদায় দিন’, কিন্তু নেসকো দুর্নীতি ও ভুলে ভরা অবস্থায় চললেও কর্তৃপক্ষের নজরে আসছে না।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিল কমবেশি হতে পারে। কিন্তু এতো কমবেশি মেনে নেয়ার মত না। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারীতে নেসকো বিল স্বাভাবিকের চেয়ের এক হাজার টাকা বেশি দেয়। পরের মাস মার্চে আবারো এক হাজার বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এপ্রিলে এসে ৬৬ হাজার ৩৫ টাকা কী করে মেনে নেয়া যায় ?

একই কথা জানান, ষষ্টিতলার জাহিদ হাসান। তিনি অভিযোগ করেন, বাসার ভেতর মিটার। যদি বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন মিটার রিডিং দেখতে আসেন, তাহলে তাদেরকে ডাকতে হবে। কিন্তু গত চারমাসে নেসকো অফিস থেকে কেউ মিটার রিডিং দেখতে আসেনি। অফিস থেকেই মনগড়াভাবে বিল দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

বিষয়টি নিয়ে নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে আগের মাসের বিল দেখে সমন্বয় করে বিল করা হয়। কিন্তু এতো কমবেশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। যেটা হয়েছে সেটা প্রিন্ট মিসটেক। তিনি বলেন, যাদের বিল বেশি এসেছে তারা অফিসে যোগাযোগ করলে বিল ঠিক করে দেয়া হবে।

 

আরপি/ এএন



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top