রাজশাহী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১

স্বাভাবিক মৃত্যুূতেও আপনজনকে শেষ দেখার সুযোগ নেই


প্রকাশিত:
১৬ এপ্রিল ২০২০ ০২:৩৪

আপডেট:
১৬ এপ্রিল ২০২০ ০২:৩৫

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখার আলম

 

‘একজন সন্তান তার সবচেয়ে আপন পিতার মৃত্যুতে পিতার মুখটি শেষবারের মত দেখার ক্ষেত্রে আজ সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট এক অপ্রীতিকর ও ভীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন । করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে মানুষ যেন তার মানবিকতা হারিয়ে ফেলছে। রাস্তায় লাশ পড়ে থাকলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসছে না। করোনায় উদ্ভুত সংকটময় পরিস্থিতিতে মানবিকতা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন’।

করোনা পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাতেও শোকাহত পরিবারগুলোকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। স্বাভাবিক নিয়ম-কানুন মেনে মরদেহ দাফনে বাধা দেয়া হচ্ছে। এমন কি বাইরে থেকে নিকটাত্মীয়দের মৃতব্যক্তিকে শেষবারের মতো দেখার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এমন সামাজিক অস্থিরতায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। এমন একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বুধবার নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইফতেখার আলম। ইউনিভার্সাল২৪নিউজের পাঠকদের সেটি হুবহু তুলে ধরা হলো।


অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখার আলম লিখেছেন, ‘গতরাত আনুমানিক নয়টার দিকে আমার এক ভাগ্নে মোবাইল ফোনে কল করে বললো, মামা একটা বিষয়ে আপনার সহযোগিতা দরকার। আমি বললাম কী ঘটনা বিস্তারিত বল। সে বললো- তার এক বন্ধু ও বন্ধুর বোন চাকুরির সূত্রে ঢাকায় থাকে। বন্ধুটির বাবা তাদের নিজ এলাকার বাসায় সন্ধ্যার দিকে মারা গেছেন। ভদ্রলোক দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে বন্ধু ও বন্ধুর বোন ঢাকা থেকে নিজ বাসায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।


কিন্তু তারা জানতে পেরেছে এলাকার অধিকাংশ লোকজন নাকি বলাবলি করছে, ঢাকা থেকে তারা আসলে উক্ত এলাকায় তাদের বাবার জানাযা করা যাবে না। ঢাকায় এখন করোনা অতিমাত্রায় ছড়িয়ে গেছে, তারা আসলে তাদের মাধ্যমে এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়বে। সুতরাং তারা ঢাকা হতে না আসলেই ভালো হয়।এ কারনে তার বন্ধু ও বন্ধুর বোন একটা অস্বস্তিকর ও ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছে। এ বিষয়ে যদি আপনি থানায় বলে দিতেন।


সব শুনে তাকে বললাম, সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জকে আমি বিষয়টি সম্পর্কে বলে দিচ্ছি এবং অফিসার ইনচার্জের মোবাইল নম্বর মেসেজ করে দিচ্ছি যেন তোমার বন্ধু এ বিষয়ে কীভাবে সহযোগিতা পেতে চায় সে ব্যাপারে কথা বলে নেয়।তার সাথে কথা বলা শেষ করার পর মনে হচ্ছিল করোনা ভাইরাস সারাবিশ্বে কি এক ভয়াবহ সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।


একজন সন্তান তার সবচেয়ে আপন পিতার মৃত্যুতে পিতার মুখটি শেষবারের মত দেখার ক্ষেত্রে আজ সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট এক অপ্রীতিকর ও ভীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন । করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে মানুষ যেন তার মানবিকতা হারিয়ে ফেলছে। রাস্তায় লাশ পড়ে থাকলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসছে না। করোনায় উদ্ভুত সংকটময় পরিস্থিতিতে মানবিকতা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন’।

আরপি/ এআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top