রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে প্রকল্পের টাকায় ১৪ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণ, প্রকল্প ফাইলবন্দি


প্রকাশিত:
১৫ জানুয়ারী ২০২০ ২২:২৩

আপডেট:
১৬ জানুয়ারী ২০২০ ০১:৪২

ছবি: সংগৃহীত

রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ কাণ্ডের রেশ ধরে চলছেই দূর্নীতির ধারা। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ দূর্নীতি যেন কমছেই না। এবার রাজশাহীর রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- আরডিএ’র ১৪ কর্মকর্তা প্রকল্পের টাকায় বিদেশ ঘুরে এবং বিলাশবহুল গাড়ি কিনে কাজ শেষ করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই বদলী হয়ে গেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে। আবার দু’জন পদোন্নতি পেয়ে এখন সচিব ও অপর দুই কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। প্রকল্পব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিনগুণ কিন্তু জমি অধিগ্রহণ হয়নি সাতবছরেও।

২০১৩ সালে ৩৮কোটি ৭৭লাখ খরচ ধরে প্রান্তিক আবাসিক এলাকা উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- আরডিএ। প্রায় ১৪ একর জায়গার এ প্রকল্পে ১৫০টি প্লট থাকার কথা ছিল। প্রকল্প তৈরির পরই ২০১৩ সালের শেষদিকে আবাসিক এলাকার জন্য মাটি ভরাট ও পরিকল্পনা কাজের অভিজ্ঞতা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও আরডিএ’র ১৪জন কর্মকর্তা প্রকল্পের টাকায় কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করেন। এজন্য খরচ হয় ৯৩লাখ টাকা।

আরোও পড়ুন:মজনুর সঙ্গে ধর্ষণের সব আলামত মিলছে, মিলছে নতুন তথ্য

সরকারী টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করা কর্মকর্তারা হলেন-গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম-সচিব ও বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব এসএম আরিফ উর রহমান, আরডিএর সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান নৌপরিবহন সচিব আব্দুস সামাদ, আরডিএ’র সেসময়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজীবুল ইসলাম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিবের সাবেক একান্ত সচিব ও বর্তমানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রতন চন্দ্র পণ্ডিত, গৃহায়ন অধিদপ্তরের পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক বেগম লুৎফুন্নেসা, মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা কোষের সাবেক ডেপুটি চিফ জালাল আহাম্মেদ, তৎকালীন গণপূর্তমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আব্দুর রহমান আকন্দ, আরডিএর হিসাব কর্মকর্তা বাসারুল কবির, অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক, সহকারি প্রকৌশলী ও প্রান্তিকের প্রকল্প পরিচালক শেখ কামরুজ্জামান, সহকারি নগর পরিকল্পক রাহেনুল ইসলাম রনি ও সহকারি এস্টেট অফিসার মাজহারুল ইসলাম। এরইমধ্যে মাজহারুল ইসলাম অবসরে গেছেন।

প্রান্তিক প্রকল্পের টাকায় ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় একটি নতুন মডেলের প্রাডো গাড়ি কেনা হয়। গাড়ির নম্বর-রাজ-মেট্টো-গ-১১-০২২৩। এই প্রকল্পে নুরুল ইসলাম নামের একজন গাড়ি চালকও নিয়োগ করা হয়। গাড়িটি ঢাকার নিকুঞ্জ এলাকায় আরডিএ র নিজস্ব রেষ্ট হাউসে রয়েছে। সেখানে আরডিএ’র কাজে এই গাড়িটি ব্যবহার করা হয়।
বিদেশ ভ্রমণ ও গাড়ি কেনার পর অদৃশ্য কারণে ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে এই প্রকল্পটি। এরপর থেকে মাঝেমধ্যে কেবল টেবিলে টেবিলে ঘুরছে প্রকল্পটি। কিন্তু অগ্রগতি নেই তেমন। তবে ২০১৮ সালে প্রকল্পটি সংশোধন করে খরচ ধরা ৪৫ কোটি ২৫লাখ ৮৫হাজার টাকা। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে আবারো খরচ বাড়ানো হয়েছে। আপাতত মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১সাল পর্যন্ত। আর জমির দাম বাড়ার অজুহাতে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৯৩ কোটি টাকা।

প্রকল্প পরিচালক শেখ কামরুজ্জামান জানান, ২০১৯ সালের ৩০ডিসেম্বর প্রকল্পটি অনুমোদ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এরপর গত ৬জানুয়ারি জমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে কী কারণে প্রকল্পে এই দশা তার কোনো সন্তোষজনক জবাবও দিতে পারেন নি তিনি।

এদিকে গত ৬ অক্টোবর অতিরিক্ত সচিব আনওয়ার হোসেন আরডিএ ’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রান্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। তিনি জানান, এই প্রকল্পের কর্মকর্তারা কেন বিদেশ ভ্রমণ করেছেন বা এ ভ্রমনের আউটপুট কী-তা জানা নেই। আগের চেয়ারম্যান বজলুর রহমানও এই প্রকল্প নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখান নি। তবে যোগদানের পর বিষয়টি নজরে আসে। এরপর থেকে কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই জমি অধিগ্রহণ করা হবে। তবে প্রকল্পটি পড়ে থাকায় আরডিএ ’র খরচ বেড়েছে। কিন্তু প্লট বিক্রিতে আগের মত আর লাভবান হতে পারবে না আরডিএ।

এদিকে, অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে সরকারি টাকায় বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণের প্রবণতা এক ধরনের মহাদুর্নীতি বলে মন্তব্য করেন বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন-এর রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কর্মকর্তারা মিলে বিদেশ ভ্রমণের উৎসব করেন। এসব বন্ধ করা না গেলে আগামীতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। সূত্র:ইউনিভার্সাল২৪নিউজ

 

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top