রাজশাহী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১

ড. তাহের হত্যা মামলার দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর


প্রকাশিত:
২৮ জুলাই ২০২৩ ১৮:৩৫

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৫৩

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাত ১০টা ১ মিনিটে রাজশাহী কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল।

কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক জানিয়েছেন, দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য প্রথমে ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয়। পরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর অপর আসামি জাহাঙ্গীর আলমকেও ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকালে অন্যদের মধ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) মো. কামাল হোসেন, রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলা সুপার আবদুল জলিল, জেলার নিজাম উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তারা ফাঁসির মঞ্চের কাছে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুই আসামির পরিবারের ৩৫ জন সদস্য তাদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করেন।

কারা সূত্র জানায়, অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। তবে তা নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক ড. এস তাহেরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিভাগের পদোন্নতি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তিনি খুনের শিকার হন। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুস সালামকে ফাঁসির আদেশ দেন। এছাড়াও রাবি ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সীকে খালাস দেন।

২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন হাইকোর্ট।

এরপর আবারও রিভিউ আবেদন করেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি। তবে এ বছরের ২ মার্চ রাবি অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুজনের ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। নিম্ন আদালতে দুজনের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় এসেছিল তাই বহাল থাকে আপিল বিভাগে, খারিজ হয় রিভিউ আবেদনও।

পরে দণ্ডিত এ দুজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে গত ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন তাদের স্বজনরা। কিন্তু উত্থাপিত হয়নি মর্মে পরে সেই আবেদনও খারিজ করে দেন বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বশির উল্ল্যার হাইকোর্ট বেঞ্চ।

ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া দুই আসামি হলেন নাজমুল আলম ও আবদুস সালাম।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘আসামিদের স্বীকারোক্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হত্যার এই ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধু প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল, ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব না। আমাদের এও বলতে দ্বিধা নেই যে, আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আবদুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহের আহমেদকে হত্যার জন্য ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন।’

 

 

আরপি/এসআর-০২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top