মেডিকেল-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আশ্বাসে দেশজুড়ে প্রতারণার জাল
মেডিকেল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়ার আশ্বাসে ভর্তিচ্ছুদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া জালিয়াতি চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের যোগসাজশে অ্যাডমিশন শিক্ষার্থী ছাড়াও চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি।
বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) বিজয় বসাক এসব জানান।
সোমবার (৬ মার্চ) বিকেলে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ইমিগেশন পুলিশ তাকে আটক করে।
পরে মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বেনাপোল পোর্ট থানার মাধ্যমে আরএমপির ডিবি পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।
গ্রেফতার প্রতারকের নাম নয়ন ইসলাম (২৫)। তিনি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার অচিনঘাট এলাকার আজগর হোসেন মন্ডলের ছেলে। নয়ন নগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায় বাস করতো।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়, ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘সারাদেশব্যাপী আসন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া ও বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দিয়ে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু এবং চাকরি প্রার্থীদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্যরা নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন নিউমার্কেট সংলগ্ন পিজি টাওয়ার বিল্ডিং-এর ১০ম তলায় অবস্থান করছে’ মর্মে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা নগরীর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মালিকদের সহযোগিতায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ও চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নিকট থেকে পরীক্ষার প্রবেশপত্রের কপি এবং চুক্তি মোতাবেক অর্থের জিম্মা হিসাবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল সনদপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহসহ প্রাথমিক খরচ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক জানান, জালিয়াতি চক্রের বিষয়টি জানতে পেরে আরএমপি কমিশনার আনিসুর রহমান মহানগর গোয়ন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আল মামুনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আব্দুল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে একটি টিম জালিয়াত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের ঐ টিম নগরীর পিজি টাওয়ারের ১০ম তলায় অভিযান পরিচালনার জন্য গেলে চক্রের সদস্যরা গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়। ফ্ল্যাটের মালিকের মাধ্যমে জানা যায় ভাড়াটিয়ার নাম নয়ন ইসলাম। সে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে বসবাস করতো।
বাড়ির মালিক আরও বলেন, নয়ন নিজেকে কখনও ডাক্তার, কখনও সরকারি কর্মকর্তা বা এনজিও কর্মী পরিচয় দিত। বিভিন্ন চাকরি প্রার্থী ও ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। সেই সুবাদে সেখানে অনেকের আসা-যাওয়া ছিল।
বিজয় বসাক আরও বলেন, পরে গোয়েন্দা পুলিশ প্রতারক চক্রের মূল হোতাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে। আসামি নয়নসহ অন্যান্য সদস্যরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরসমূহে বিশেষ পত্র পাঠানো হয়। কিন্তু আসামি নয়ন এর আগেই ভারতে পালিয়ে যায়।
পরে সোমবার (৬ মার্চ) বিকেলে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ইমিগেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে নয়ন।
পরদিন মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বেনাপোল পোর্ট থানার মাধ্যমে আরএমপির ডিবি পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামি জানায়, সে ও তার সহযোগী পলাতক আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলর বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র সনেটসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন সহযোগী পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থী, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অ্যাপসের (হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, টেলিগ্রাম) মাধ্যমে যোগাযোগ করতো। তারা চাকরি দেওয়ার কথা বলে এবং বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিবে মর্মে আশ্বাস দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, রকেট, নগদ) এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত।
এ ঘটনায় পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতার আসামিসহ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পেনাল কোডে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা।
আরপি/এসআর-১৪
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: