রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

মাউশি: কর্মকর্তাদের অনিয়মের শাস্তি প্রোগ্রামার ডলির বদলি


প্রকাশিত:
১৪ অক্টোবর ২০২২ ১০:১৭

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ১০:৫৯

ফাইল ছবি

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) রাজশাহী অঞ্চল কার্যালয় নিয়ে সমালোচনা ও নিন্দা যেন থামছেই না। মাউশি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমপিও বাণিজ্য, পদোন্নতি এবং উচ্চতর স্কেল পেতে ব্যাপক অনিয়ম এবং হয়রানির অভিযোগ বহু পুরনো। রাজশাহী অঞ্চলের কলেজ শিক্ষকদের ভাষ্য অর্থ ছাড়া নড়ে না মাউশি কর্মকর্তাদের কলম।

সম্প্রতি এসব অনিয়ম ও হয়রানি কর্মকাণ্ডে মাউশি রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী প্রোগ্রামার ডলি রানী পালের সম্পৃক্ততা মিলেছে। পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের অনিয়মে ডলি রানী পাল সহযোগিতা করতেন বলে জানা গেছে।

ডলি সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন সেক্টর ইনভেস্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) আওতায় রাজশাহীতে কর্মরত ছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর সেসিপ তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে আদেশ জারি করে। সেসিপ প্রকল্পের যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক প্রফেসর ড. সামসুন নাহার ওই আদেশ জারি করেন।

তবে শাস্তির মুখে বদলি করা হলেও নতুন কর্মস্থলে যোগ দেন ডলি রানী পাল। অভিযোগ উঠেছে, আগের জায়গায় থাকতে জোর তদবির চালাচ্ছেন তিনি। এমন কি তাকে ফেরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মাউশি রাজশাহী কার্যালয়ের পরিচালক প্রফেসর ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদ।

বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে মাউশি রাজশাহী কার্যালয়ে পরিচালক ও সহকারী পরিচালককে অনুপস্থিত পাওয়া যায়। অন্য কর্মীরা বলছেন, তারা দুজনেই জরুরি কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

তাদের দাবি, অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগে ডলি রানী পালকে অন্যত্র বদলির পর নড়েচড়ে বসেছেন পরিচালক ও সহকারী পরিচালক। নিজেদের শাস্তি ঠেকাতে ঢাকায় জোর তদবির চালাচ্ছেন তারা।

জানা যায়, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগের সত্যতা মেলায় শাস্তির মুখে পড়েছেন ডলি রানী পাল। চলতি বছরের ৩০ মার্চ মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন শাখার পরিচালক প্রফেসর আমির হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

গত ১২ এপ্রিল রাজশাহীতে এসে সরেজমিন তদন্ত করে যায় ওই কমিটি। গত ২৪ আগস্ট তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর শাস্তিমূলক বদলির সুপারিশ করেন মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-২) তানভীর হাসান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুটি অভিযোগের কোনোটিতেই সহকারী প্রোগ্রামার ডলি রানী পালের নাম পাওয়া যায় নি। তবুও তদন্তকারী কর্মকর্তারা তার সাথে কথা বলেন। তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে কমিটি ডলি রানী পালের অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে। এত প্রেক্ষিতেই ডলি রানী পালকে শাস্তিমূলক বদলির আদেশ দেওয়া হয়।

তবে শিক্ষকদের অভিযোগ, এসব অনিয়ম ও অপকর্মের মূল হোতা পরিচালক ও সহকারী পরিচালক এখনও স্বপদে বহাল। কিন্তু অনিয়ম ও অপকর্মের সহযোগী ডলি রানী পাল শাস্তির মুখে পড়েছেন। ডলিকে বাঁচিয়ে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন পরিচালক ও সহকারী পরিচালক।

এ বিষয়ে জানতে ডলি রানী পালের মোবাইলে একাধিক বার কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ নিয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায় নি।

তবে তিনি মাউশি বরিশাল অঞ্চলে যোগদান করেননি বলে জানিয়েছেন সেখানকার আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তার দপ্তরে ওই পদটি শূন্য। তিনি (ডলি রানী পাল) সেখানে যোগদান করার কথা। কিন্তু ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যোগদান করেন নি। যোগদান করবেন কি-না সেই তথ্যও তার জানা নেই।

এদিকে বহু আগে থেকেই মাউশির রাজশাহী আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ছিল শিক্ষকদের। এমপিওভুক্তি, পদোন্নতি কিংবা উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তি, কোনোটাই মিলে না আর্থিক উপঢৌকন ছাড়া। অঞ্চলে এমপিওর নামে আড়াই হাজার শিক্ষকের কাছে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ছিল, এমপিও আবেদন বাতিলের নামে হয়রানির।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে অভিযোগ আমলে নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মাউশিকে পুরো বিষয় তদন্তের জন্য চিঠি দেয় দুদক। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে মাউশি। সরেজমিন তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিয়েছিল মাউশি।

এছাড়াও পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অসদাচরণ, এমপিওভুক্তি, পদোন্নতি ও উচ্চতর স্কেল প্রদানে অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি রাজশাহী অঞ্চল।

এ বিষয়ে মাউশির রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর ড. কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ডলি রানী পালের নামে কখনোই কোনো অভিযোগ ছিল না। তাই তার নামে তদন্ত করারও কথা নয়। হয়তো পরিস্থিতি বুঝতে তার সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু কি প্রমাণ পেয়েছেন সেটাও আমার জানা নেই।

পরিচালকের দাবি, আমার জানা মতে ডলি রানী এমন কোনো দিন কাজ করেননি। তিনি বরাবরই পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করেছেন। কাজের প্রতিদানরূপ তার পুরষ্কার পাবার কথা, কিন্তু তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। অফিস প্রধান হিসেবে পরিচালকের মতামতও নেওয়া হয় নি। তদন্ত কমিটি প্রভাবিত হয়ে পক্ষপাতমূলক তদন্ত করেছে বলেও অভিযোগ করেন এই কর্মকর্তার।

তবে তদন্তে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাউশির তদন্ত কমিটির প্রধান এবং মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন শাখার পরিচালক প্রফেসর আমির হোসেন।

তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। আমাদের দায়িত্ব ছিল তদন্ত করেছি, সেই অনুযায়ী রিপোর্ট দিয়েছি আরও কয়েক মাস আগেই। এর সামনে পেছনে কিছু বলতে পারবো না।

তদন্তে পক্ষপাতের বিষয়ে তিনি বলেন, উনাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পক্ষপাতমূলক মনে হতে পারে। তবে যারা দায়িত্ব দিয়েছেন তারা প্রতিবেদন দেখলেই বুঝতে পারবেন।

সহকারী প্রোগ্রামারকে বদলির বিষয়ে সেসিপের যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক প্রফেসর ড. সামসুন নাহার জানান, মাউশি ডলি রানী পালের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। তাকে শাস্তিমূলক বদলির সুপারিশ। এর প্রেক্ষিতে ডলি রানী পালকে বদলি করা হয়।

তবে কি কারণে তিনি যোগদান করেননি, কখন যোগদান করবেন বিষয়টি খোঁজ নিতে হবে। কেন তিনি আদেশ অমান্য করলেন বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন এ কর্মকর্তা।

 

 

আরপি/এসআর


বিষয়: মাউশি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top