রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

১৯ বছর ধরে চা বিক্রিতেই চলে আ’লীগ নেতার সংসার


প্রকাশিত:
৬ আগস্ট ২০২২ ০৩:২৪

আপডেট:
৬ আগস্ট ২০২২ ০৩:২৪

ছবি: সংগৃহিত

কাপে চা ঢালেন আর কল্পনা করেন উন্নয়নের ছোঁয়ায় শহর থেকে গ্রামের রাস্তাঘাট উন্নত হবে। সকল মানুষ সমানভাবে সুবিধা ভোগ করবে। একদিন উন্নত দেশগুলোর মত এই দেশও শীর্ষে থাকবে। কিন্তু তার চুলাই একদিন চায়ের পানি না জ্বালালে সংসার চলে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদ এলাকায় চায়ের দোকানী বিপন্ন কুমার সরকারের (৪৮)।

বিপন্ন কুমার সরকার। পেশায় চা-বিস্কুটের দোকানি। রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদ এলাকায় চায়ের দোকান তার। এই ছোট্ট ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়েই চলে সংসার তার। তিন সন্তানের জনক বিপন্ন কুমার ১৯ বছর ধরে চা বিক্রি করে আসছেন। সন্তানদের পড়াশোনার খরচও জুগিয়ে থাকেন চায়ের ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়েই।

তার একমাত্র ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু। পাশাপাশি ক্রিকেট অনুরাগীও। অংশ নিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৮ ও ১৯ টুর্নামেন্টে। আর দুই মেয়ের প্রথমজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও অন্যজন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। চায়ের দোকানি ছাড়াও বিপন্ন কুমারের অন্য একটি পরিচয় রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা তিনি।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন ৪৮ বছর বয়সী বিপন্ন কুমার। টানা তিনবারের ক্ষমতাসীন দলের নেতার এমন জীবনযাপন অনেকের কাছেই ভাবনার। এমন সাদামাটা চলাফেরায় প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।

বিপন্ন কুমার সরকারের সঙ্গে কথা হয় রাজশাহী প্রতিনিধির। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘প্রায় ১৮ বছর ধরে আমি এই ব্যবসা করছি। এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসারের যাবতীয় খরচ চলে। খরচ যোগাতে হয় সন্তানদের পড়াশোনারও।’

রাজনৈতিক জীবন নিয়ে জানতে চাইলে বিপন্ন কুমার বলেন, ‘চা-বিস্কুট বিক্রির পাশাপাশি আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত আছি। বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজশাহী মহানগর শাখার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছি।

রাজনৈতিক জীবনের শুরু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এরশাদের আমলে স্বৈরাচারী আন্দোলনে সারা বাংলাদেশের মানুষ যখন রাজপথে নেমেছিল, তখন আমিও রাজপথে ছিলাম। সেখান থেকেই ছাত্রজীবনে থেকেই রাজনৈতিক জীবন শুরু।’

বিপন্ন কুমার বলেন, ‘সেই সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিষয়টি জানতে পেরে ভালো লাগে। তখন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালে ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। দীর্ঘ ৮ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম। পরবর্তীতে ২০১১ সালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পাই। পরে ২০১৫ সালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যে আপ্রাণ চেষ্টা করে দেশটাকে স্বাধীন করেছেন, সেজন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে অর্থাৎ স্বাধীনতার পক্ষের রাজনীতিতে মুগ্ধ হই। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে দেশটা স্বাধীন হয়েছে তার কারণেই আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হই।’

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য নিঃস্বার্থভাবে সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। দলীয় প্রোগ্রামে অংশ নিতে গিয়ে অনেক সময় দোকান বন্ধ রাখতে হয়। অনেক সময় দোকানের সহকারীকে রেখে যেতে হয়। অনেক সময় কষ্ট হলেও যখন ভাবি আমি একজন সৎ কর্মী, সততার সঙ্গে কাজ করছি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে কাজ করছি, তখন ভালো লাগে।-বলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

গত এপ্রিলে বিপন্ন কুমারের সততা ও কর্মনিষ্ঠায় মুগ্ধ হয়ে ৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ও দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি। সৎপথে থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে এলাকাবাসীর পাশে থাকার প্রত্যাশা করেন তিনি।

বিপন্ন কুমারের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার সততা ও দলের প্রতি ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়ে ৫ লক্ষ টাকা অনুদান হিসেবে পাঠিয়েছেন। সংসার জীবনে এই দোকান আর ধারদেনা করেই চলছে। আমরাও হতভাগা এতবছর ক্ষমতায় থেকে যারা জনপ্রতিনিধি আছে তারাসহ মূল্যায়নটা করতে পারলাম না। যারা দলে অনুপ্রবেশকারী তারাই সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। এসব নিয়ে আমরা নিজেরাও হতাশায় আছি।’

 

আরপি/এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top