রাজশাহী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মার চরে বিষাক্ত সাপ-পোকার উপদ্রব, আতঙ্কে চাষাবাদ বন্ধ


প্রকাশিত:
২৩ নভেম্বর ২০১৯ ২১:১২

আপডেট:
২৩ নভেম্বর ২০১৯ ২১:২১

ছবি: প্রতীকী

 

পাবনার সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের চর সদিরাজপুরে দেখা দিয়েছে বিষধর সাপ ও পোকার আতঙ্ক। এরই মধ্যে বিষাক্ত পোকার কামড়ে মারা গেছেন এক ব্যক্তি। আর বিষধর সাপের কামড়ে গুরুতর আহত আরেক ব্যক্তি রয়েছেন হাসপাতালে। আতঙ্কে চরের জমিতে চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, শুষ্ক মৌসুমে প্রতি বছরই পাবনার পদ্মার চরগুলোতে পেঁয়াজ, মশুর, মাসকলাই, সরিষাসহ রবিশস্য আবাদ করা হয়। কিন্তু চলতি বছর বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পরেও সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের চরসদিরাজপুর গ্রামের এই সুবিশাল চর এখনো অনাবাদী ও ঝোপ-জঙ্গলে ভরা।

কৃষকরা জানান, এ বছর উজান থেকে নেমে আসা পদ্মার পানিতে হঠাৎ বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল উপজেলার ২৫০০ বিঘা আয়তনের সবচেয়ে উঁচু এ চরটিও। পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা কাজে গিয়ে দেখতে পান নানা ধরনের অপরিচিত সাপ ও পোকা মাকড়ের আনাগোনা। ফসল আবাদের জন্য জমির ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার করতে গিয়ে সম্প্রতি বিষাক্ত পোকার কামড়ে মারা যান আফজাল কাজী (৫০) নামে এক ব্যক্তি। সাপের কামড়ে গুরুতর আহত হয়ে নজরুল ইসলাম (৩৫) নামের আরেক কৃষক রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

পোকার কামড়ে মারা যাওয়া আফজাল কাজীর ছেলে শাহীন জানান, বাবা ১ নভেম্বর মাঠে কাজ করতে যান। জঙ্গল পরিষ্কারের সময় তাকে বিছা-কাঁকড়ায় কামড় দেয়। বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই, সেখানে চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সপ্তাহখানেক আইসিইউ-তে থাকার পর মারা যান তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিষক্রিয়াতেই তার মৃত্যু হয়েছে।

সরেজমিনে চরসদিরাজপুরে গিয়ে দেখা যায়, শুকিয়ে আসা শীর্ণ পদ্মায় ছোট নৌকায় পার হতে হয় আক্রান্ত চরে যেতে। কোনো বসতবাড়ি নেই, তবে পলি পড়া উর্বর চরের জমিতে ফসল ভালো হয়। গরু, মহিষ, ভেড়াসহ গবাদিপশুর বাথান রয়েছে স্থানীয়দের। উর্বর এ জমির ফসলের ওপর কয়েকশ’ পরিবারের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল হলেও আতঙ্কে চরে যেতেই ভয় পাচ্ছেন তারা।

দোগাছি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী জানান, আগে কখনো এ ধরনের অপরিচিত সাপ, পোকার আনাগোনা দেখা যায়নি। এ বছর চরে কাজ করতে আসা অনেকেই বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পোকা দেখেছেন। আমি নিজেও কয়েকটি জঙ্গল পরিষ্কারের সময় বেশ কিছু সাপ দেখেছি।

আফজাল কাজীর মৃত্যুর পর চাষিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আবাদ করতে আসতেই ভয় পাচ্ছেন তারা। ফলে বিশাল এ চর চলতি বছর অনেকটাই অনাবাদী পড়ে রয়েছে।

এদিকে, স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম, কৃষি কর্মকর্তা এস এম মাসুম বিল্লাহ, জেলা কীটতত্ত্ববিদ হেলাল উদ্দিনসহ উপজেলা প্রশাসনের আট সদস্যের তদন্ত কমিটি। বন্যার কারণে সাপ ও পোকার উপদ্রব বেড়েছে বলে ধারণা তাদের।

জেলা কীটতত্ত্ববিদ হেলাল উদ্দিন বলেন, পোকার কামড়ে মারা যাওয়া আফজাল কাজীর পরিবারের বক্তব্য ও দেখানো ছবিতে মনে হচ্ছে তিনি স্করপিয়ন জাতীয় বিছা-কাঁকড়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ধরনের পোকার বিষক্রিয়ায় মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, উজান থেকে নেমে বন্যার পানিতে বিভিন্ন ধরনের পোকা ও সাপের উঁচু এই চরে আশ্রয় নিয়েছে বলে ধারণা করছি। তবে নিশ্চিত হতে আরও পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।

পাবনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, পোকা ও সাপের উপদ্রবের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন অবগত রয়েছে। প্রয়োজনীয় উপকরণ ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। আতঙ্কিত না হয়ে স্থানীয়দের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিহত চাষি আফজাল কাজী ও আহত নজরুলের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।

 

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top