রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে ১৫০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন ৫৪ জন কনস্টেবল


প্রকাশিত:
১১ নভেম্বর ২০২১ ০২:১৬

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:২৪

ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের নিয়োগ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে একটা ধারণা, তদবির আর ঘুষ ছাড়া চাকরি মেলে না। কিন্তু এই ধারণা এবার মিথ্যা প্রমাণিত করে ১৫০ টাকা খরচে রাজশাহীতে চাকরি পেয়েছেন ৫৪ জন কনস্টেবল। মৌখিক পরীক্ষা শেষে সোমবার রাতে তাদের প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৫৪ জনের পাশাপাশি অপেক্ষমান তালিকাও প্রকাশ করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কেউ বাদ পড়লে অপেক্ষামান তালিকা থেকে নেয়া হবে বলে জানিয়েছে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন সরকারি খরচে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উতরে গেলেই তাদের ব্যবস্থা করা হবে প্রশিক্ষণের। পেশাদারিত্বের প্রশিক্ষণ শেষে যোগ দেবেন নিজ কর্মস্থলে।

যারা চাকরি পেয়েছেন, তারাও বলছেন একই কথা। তাদের ভাষ্য, শুধু নিজের যোগ্যতায় ধরতে পেরেছেন চাকরি নামের সোনার হরিণ।

এর আগে সারাদেশে প্রায় তিন হাজার কনস্টেবল নিয়োগের জন্য গত সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। সেখানে রাজশাহী জেলায় ৫৪ জন নিয়োগ দেয়ার কথা ছিলো। এরমধ্যে ৪৬ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী।

সীমিত সংখ্যাক এই পদের জন্য রাজশাহী জেলায় অনলাইনে আবেদন করেন ৯ হাজার ৬৫৬ জন। পুলিশ সদর দফতর চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনে দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে বাদ পড়েছেন ৭ হাজার ৪৯৬ জন। বাকি ২ হাজার ১৬০ জন ডাক পান শারীরীক পরীক্ষার জন্য।

এরপর ২৯ অক্টোবর শুরু হয় এ পরীক্ষা। নতুন নিয়মে কয়েকটি ধাপে শারীরীক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন ৬২২ জন। তারা লিখিত পরীক্ষা দেন। এ পরীক্ষায় পাস করেন ১৫২ জন। গত সোমবার তাদের নেয়া হয় মৌখিক পরীক্ষা। রাত ১২টার দিকে সবার উপস্থিতিতেই প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন জেলার পুলিশ সুপার।

যারা প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তারা বলছেন, ‘ধারণা ছিল যে মামা-খালু আর টাকা ছাড়া কোন চাকরি হবে না। আমার এ ধারণা আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের টাকাও নেই, মামা-খালুও নেই। তাও নিজের যোগ্যতায় চাকরিটা পেয়েছি। আমাদের এ খুশি রাখার জায়গা নেই। রাতে পুলিশ লাইনে ফলাফল ঘোষণার পর প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের ঐ পুলিশ কর্মকর্তা বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেন বলে জানিয়েছেন তারা।

নির্বাচিত সঞ্জয় কুমার বর্মন নামের একজনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘যখন কম্পিউটারের দোকানে অনলাইনে আবেদন করতে যাই, তখন একজন প্রশ্ন করেছিলেন চাকরি পেতে আমি কাকে ধরেছি। টাকা-পয়সা রেডি করেছি কি না। আমি বলেছিলাম, ওপরে আল্লাহ আর নিচে বাবা-মায়ের দোয়া। এ ছাড়া আমার কেউ নেই। তার বাবা ভ্যান চালাতেন। সঞ্জয় নিজেও ভ্যান চালাতেন। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে সঞ্জয় জেলা পুলিশ লাইন্সে এসেছিলেন বাবার ভ্যানে চড়েই। আমি আজ শুধু ১০০ টাকার ট্রেজারি চালান আর আবেদনের খরচ মিলে ১৫০ টাকায় সরকারি চাকরি পেয়েছি। বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি আজ চাকরি পেয়েছি বিনাপয়সায়।

এদিন নির্বাচিতদের রাতেই ফুল দিয়ে বরণ করে নেন এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন। তিনি বলেন, নতুন নিয়মে এবার পুলিশে নিয়োগ হচ্ছে। অনলাইনে আবেদন করার পর তথ্য-যাচাই বাছাই করে শারীরীক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিতদের তালিকা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। তারপর রাজশাহীতে শারীরীক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এতে উত্তীর্ণদের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখা হয় সদর দপ্তরে।

তিনি আরও বলেন, যারা চাকরি পেয়েছেন সবাই ঘুষ-তদবির ছাড়াই পেয়েছেন। শুধু কোড নম্বরে পাঠানো খাতা দেখে বোঝার উপায় ছিল না এটা কার খাতা। তাই এ নিয়োগে কোন প্রার্থীর পক্ষে কেউ কাজ করবে, এ রকম কোন সুযোগই ছিলো না।

 

আরপি/ এমএএইচ-০৩



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top