রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের হিড়িক


প্রকাশিত:
১ নভেম্বর ২০২১ ০৮:২৮

আপডেট:
১ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৩৬

ছবি: বালু উত্তোলন

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চলের লক্ষ্মীনগর এলাকার পদ্মায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের হিড়িক দেখা দিয়েছে। অর্ধ শতাধিক ছোট-বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও কারগো নদীর ঘাটে ভিড়ানো। বালু তোলার কাজে এসব নৌকায় বিভিন্ন সরঞ্জামসহ ব্যবহারযোগ্য বোমা মেশিন রয়েছে। যা অনেকের কাছে ড্রেজার মেশিন নামে পরিচিত। এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে পদ্মার তলদেশ থেকে তোলা হচ্ছে বালু। বালু তোলার এ যেন এক মহোৎসব ।

স্থানীয়রা জানান, পদ্মা নদীর এ এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলা হলেও প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি কিংবা স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কেউ কখনো এ বিষয়ে দেখভাল করতে আসেনি। অপরিকল্পিতভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ বালু তোলার ফলে বাড়ি-ঘর ও নদীর পাড় হুমকির মুখে ভাঙনে বিনষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি। মারাত্মক সংকটে পড়েছে জনজীবন । অবৈধভাবে বোমা মেশিনে বালু তোলার পর সেখান থেকে নৌকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। নদীর বাঁকে বাঁকে বোমা মেশিনে পাইপে করে বালু তোলার উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। পরিবেশ অভিজ্ঞদের মতে ড্রেজার কিংবা মেশিনে বালু তোলার শব্দের কারণে জনসাধারণের পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি হবে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী মেম্বার ফাতেমা বেগম বলেন, কার কথা কি কমু। এই কাজের সাথে অনেকেই জড়িত। নিজেও তো দেখবার পাচ্ছেন, বালু তোলার কারণে জেগে উঠা চর কিভাবে ভাঙছে। কেউ তো ফিরেও দেখেনা। কারো নাম কইয়া বিপদে পড়তে রাজি নই। তবে কয়েকমাস ধরেই পদ্মার ভাঙ্গন কম বেশি চলছে বলেও জানান তিনি। এতে এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি ও আবাদি জমি-গাছপালা নদী গর্ভে গেছে। দীর্ঘ দিনের ভাঙ্গনে চলে গেছে চকরাজাপুর গ্রামটি। চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৩ ভাগের একভাগ চলে গেছে নদীগর্ভে।

নদীর তলদেশ থেকে বোমা ও ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখিয়ে পলাশি ফতেপুর গ্রামের মোবারক শেখ বলেন, বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজন।

স্থানীয় আব্দুস সালাম শেখ বলেন, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে নিদিষ্ট সীমানার বাইরে নদী পাড়ের কাছাকাছি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

তারা জানান,উপজেলার তিনটি বালুমহাল বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত আাবেদন করেছিলেন পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোলাম ফারুক। বালু মহল তিনটি হলো- উপজেলার কিশোরপুর.চকরাজাপুর ও লক্ষীনগর। তার আবেদনে নানা রকম ক্ষতির কথা তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু কোন ফল হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লক্ষ্মীনগরসহ পলাশি ফতেপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী। তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না। প্রশাসনও তাঁদের কাছে অসহায়। কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বেশ কিছু লোকজন একত্রিত হয়ে বালু তুলছেন।

তাঁদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ছোট-বড় মিলে একটি নৌকায় বালু যায় ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার ফুট। প্রতিফুট বালুর জন্য দিতে হয় ২ টাকা হিসেবে। আর মাস্তানদের দিতে হয় প্রতিদিন ৩ হাজার ৫০০শ’ টাকা।

উপজেলার পদ্মার এপারে লক্ষীনগর,জোতাশি ও কালিদাশখালি গ্রাম। আর পদ্মার ওপারে দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর,রায়টা ও চিলমারি গ্রাম। এ দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী লোকজনের সাথে বালু উত্তোলনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে, গোলাগুলিসহ অস্ত্রের মহড়াও চলেছে। গত আগষ্ট মাসে উপজেলার লক্ষীনগর এলকায় চাঁদাবাজি করতে এলে দৌলতপুর থানার, ফিলিপনগর ও ফারাকপুর গ্রামের ৩জনকে দেশীয় অস্ত্র ও গুলিসহ (পিস্তল, পাইপগান ও গাদা বন্দুকসহ তিন রাউন্ড গুলি) আটক করে পুলিশে দেয় জনতা। তাঁদের ব্যবহৃত শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকাও আটক করা হয়। এর আগেও ড্রেজার মিশিনসহ ৪টি নৌকা আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, ইজারা নেওয়া হলেও বোমা মেশিন ব্যবহার, নদী তীরের কাছাকাছি বালু তোলা মানে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করা।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এসব বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তবে ৬০ একর জলমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে। শর্ত ভঙ্গ করে অন্যান্য স্থানে বালু তোলার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত(ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা বলেন, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা ভূমি অফিস সুত্রে জানা গেছে, ১৪২৮ সনের জন্য চকরাজাপুর ও লক্ষীনগর বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন রাজশাহীর কাটাখালি এলাকার সাব্বির হোসেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সবকিছুই তো জানেন-বোঝেন। এ বিষয়ে পরে কথা বলছি বলে ফোন কেটে দেন। 

 

 

আরপি/এসআর-০৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top