রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

জিআই স্বীকৃতি পাচ্ছে রাজশাহীর ফজলি আম


প্রকাশিত:
২২ অক্টোবর ২০২১ ০৫:৩০

আপডেট:
২২ অক্টোবর ২০২১ ০৫:৩২

ফাইল ছবি

২০১৭ সালের ৯ মার্চ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক অফিস রাজশাহী ফজলি আমের ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে।

একইসাথে বাগদা চিংড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতির জন্য প্রায় দুই বছর পর আবেদন করে বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর।

তবে, এই দীর্ঘ সময় পর ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে একসাথে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ফজলি আম ও চিংড়ি মাছ।

ইতোমধ্যে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি নেওয়ার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্টার মো. আবদুস সাত্তার।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে।

জিআই সনদ পেলে ফজলি আম ও বাগড়া চিংড়ি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পাবে। অন্য কোনো দেশ আর সেগুলোকে নিজেদের বলে দাবি করতে পারবে না।

পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রথম দফায় ৩টি পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। এগুলো হচ্ছে- জামদানি, ইলিশ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম। দ্বিতীয় ধাপে ৬টি পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতি মেলে।

পণ্যগুলো হলো- ঢাকাই মসলিন, রাজশাহী সিল্ক, কালিজিরা চাল, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, বিজয়পুরের (নেত্রকোনা) সাদামাটি ও শতরঞ্জি। এর সঙ্গে ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ি যুক্ত হলে মোট জিআই পণ্য হবে ১১টি।

সরকারের পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগের রেজিস্টার মো. আবদুস সাত্তার জানান, ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ির জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে গেজেট প্রকাশ করা হয়ে গেছে। আর মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে সনদ দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে যাবে।

আবদুস সাত্তার আরোও জানান, নিয়ম অনুযায়ী স্বীকৃতির জন্য আবেদন আসার পরে এই দুটি কৃষি পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক যাচাই করা হয়েছে, দুটি জার্নাল প্রকাশ করা হয়েছে।

এই পণ্যের নির্দেশক নিয়ে এখনো কেউ আপত্তি করেনি। জার্নাল প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে এটি নিজেদের বলে কেউ আপত্তি না করলে সনদ দেওয়া হয়।

আমের মৌসুমের শেষের দিকে বাজারে আসা ফজলি পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও উৎপাদন হয়। আর লবণাক্ত পানির বাগদা চিংড়ি এশিয়ার বেশ কিছু দেশে হয়।

কিন্তু এই কৃষিপণ্য দুটি কেন বাংলাদেশের জিআই সনদ কেন পাবে সেটি ব্যাখ্যা করেন মো. আবদুস সাত্তার।

তিনি বলেন, যে পণ্য একটি অঞ্চলের ঐতিহ্যের অংশ সেটির ক্ষেত্রে এই সনদ দেয়া হয়। আবহাওয়া, মাটি, পানি ও ভৌগোলিক গঠনের উপরে যেকোনো কৃষিপণ্যের বৈশিষ্ট্য, ঘ্রাণ ও স্বাদ নির্ভর করে এবং নির্দিষ্ট অঞ্চলেই সেটা হবে।

যেমন এশিয়ার বেশ কিছু দেশে ‘ব্ল্যাক টাইগার শ্রিম্প’ বা বাগদা চিংড়ি পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের এখানে যেটা হয় সেটার বৈশিষ্ট্য অন্য কোনোটার সঙ্গে মিলবে না। অন্য কোথাও চাষ হলেও সেটার স্বাদ ও ঘ্রাণ মিলবে না।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মোট ৩৭টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে উপরোক্ত ১১টি পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে। বাকি ২৬টি পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রংপুরের হাড়িভাঙা আম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, নোয়াখালীর মহিষের দুধের দই ইত্যাদি।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৯ জুনে বাংলাদেশে নতুন করে আরও পাঁচটি পণ্য জিওগ্রাফিক্যাল আডেন্টিফিকেশন (জি-আই) বা ভৌগলিক নির্দেশক হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।

এ নিয়ে বাংলাদেশে মোট জিআই পণ্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯টিতে। বিশ্ব বাজারে রাজশাহীর রফতানি অঞ্চলের পাট, রেশম, হস্তশিল্প ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিসারিপাত আম থেকে একবছরে আয় হয়েছে ৫ কোটি ৩৯ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩৮৯.৭০ মার্কিন ডলার।

 

আরপি/ এমএএইচ-০৩



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top