রাজশাহী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নামে টাকা চেয়ে স্কুলে চিঠি!


প্রকাশিত:
২২ অক্টোবর ২০১৯ ০৬:০১

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ২৩:০৭

ছবি: ইউরোপীয় ইউনিয়নের নামে টাকা চেয়ে স্কুলে চিঠি

রাজশাহী বিভিন্ন উপজেলার নামকরা স্কুলগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়নের প্রলোভন দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তার নামে চিঠি পাঠিয়ে প্রতারকচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে  কাজ করছে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলো প্রতারিত হচ্ছে।

জানা গেছে, কয়েকদিন আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পরিচয়ে এম আশরাফুল আলম চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউরোপিয়ান কমিশনের যৌথ উদ্যোগে প্রমোট বিদ্যালয় উন্নয়ন-দ্বিতীয় প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়ের উন্নয়নে এককালীন অনুদান দেয়া হবে। এজন্য চিঠি পাওয়া মাত্রই মোবাইল ফোনে যোগাযোগের জন্যও বলা হয়। চিঠি পাওয়ার পর সেই নাম্বাওে ফোন করা হলে তা স্বীকারও করেছেন এম আশরাফুল আলম চৌধুরী নামের ওই ব্যক্তি।


তিনি দাবি করেন, স্কুলগুলোতে মেয়েদের কমন রুম নির্মাণের জন্য ৬ লাখ ২০হাজার টাকা দেয়া হবে। তবে সেটি ছাড় করাতে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে।

 

এবিষয়ে নওহাটা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আখতার ফারুক জানান, এই চিঠি হতে পাওয়ার পর তিনি আশেপাশের কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারাও এমন চিঠি পেয়েছেন। চিঠির কথা মতো কেউ কেউ ফোনে উপ-সচিব পরিচয় দেয়া আশরাফুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ‘মিষ্টি খাওয়ার’ নামে বিকাশে টাকা পাঠাতে বলেন।


মাসকাটাদীঘি স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক আকতার হাসান জানান, চিঠি পেয়ে আশরাফুল আলম চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে একব্যক্তির মোবাইল নাম্বার দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।  একইভাবে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে ওই ব্যক্তিও টাকা ছাড়ের জন্য ‘মিষ্টি খাওয়ার’ টাকা দাবি করেন।

পবা উপজেলার কাটাখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহররম আলী খান বলেন,  চিঠিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লোগোসহ প্রমোট প্রকল্প ও ইউরোপীয়  ইউনিয়নের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু চিঠির ফরম্যাট দেখেই আমার সন্দেহ হয়,এটি সরকারী চিঠি নয়।

শুধু প্রমোট বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন নয় বিভিন্ন সময়ে নানা লোভনীয় অনুদানের কথা বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

পবা উপজেলার নওহাটা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর আলী জানান, এর আগে সাবেক রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাধন কুমারের পরিচয়ে তাকে ফোন করে বলা হয়, তার স্কুলের জন্য ২০টি ল্যাপটপ বরাদ্দ হয়েছে। পাশাপাশি ১৭০ শিক্ষার্থীকে বিশেষ উপ-বৃত্তি হিসেবে প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা করে দেয়া হবে। মন্ত্রণায়লয়ে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র প্রস্তুত করতে ৩০ হাজার টাকা লাগবে। ওই টাকা দ্রুত বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে বলা হয়। তবে সাধন কুমার টাকা চাইতে পারেন না- এমন সন্দেহ হওয়ায় ওমর আলী টাকা বিকাশ করেন নি।

 

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহা. নাসির উদ্দিন বলেন, প্রমোট নামে এক প্রকল্পের আওতায় মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বেশ কয়েক বছর আগে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। সে প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তবু একটি চক্র এপ্রকল্পের নামে প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে প্রতারকদের ফাঁদে পা না দিতে শিক্ষা অফিস থেকে সতর্ক করে স্কুলগুলোতে চিঠিও দেয়া  হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ও জানে।  তবে এখন পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে কোনো আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

 

আরপি/আআ

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top