রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্তির পথে চারঘাটের ঐতিহ্যবাহী খয়ের শিল্প


প্রকাশিত:
১৩ মার্চ ২০২১ ০০:৪১

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৫৫

ছবি: প্রতিনিধি

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা খয়ের শিল্পের জন্য বিখ্যাত। উৎপাদনের জন্য অনুকূল আবহাওয়া থাকলেও পর্যাপ্ত কাঁচামাল, উৎপাদিত উৎকৃষ্টমানের খয়েরের নায্য দাম না পাওয়া ও করোনাকালীন সময়ে বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তারা। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজারও শ্রমিক।

জানা যায়, ১৯৫২ সালে রাজশাহীর চারঘাটের গোপালপুর গ্রামে খয়ের শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। এরপর পঞ্চাশের দশকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা বিহারিদের মাধ্যমে এই শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসার ঘটে। উৎপাদিত এই খয়ের ঢাকা, দিনাজপুর, রংপুর ও ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হতো। বেশিরভাগ খয়ের কারখানাগুলো চারঘাট উপজেলার গোপালপুর ও বাবুপাড়া গ্রামে অবস্থিত।

উৎপাদনের একমাত্র কাঁচামাল খয়ের গাছ উপজেলার বিভিন্ন জঙ্গলে ও চাষাবাদযোগ্য জমিতে উৎপাদিত হতো। তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় চারঘাটে এই শিল্পটি গড়ে ওঠে। পাশাপাশি নাটোরের আব্দুলপুর, লালপুর, বাগাতিপাড়া ও লোকমানপুর এলাকা থেকেও কাঁচামাল হিসেবে এই খয়ের গাছ এনে চারঘাট বাজারে বিক্রি হতো। শুরুতে প্রায় একশটি ছোট-বড় খয়ের উৎপাদন কারখানা থাকলেও এখন উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে মাত্র ১০ থেকে ১৫টি কারখানা।

একটি খয়ের গাছ তৈরি হতে সময় লাগে প্রায় ৩০ বছর। কিন্তু এখন খয়ের উৎপাদনের চেয়ে আমচাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা। সহজলভ্য ও লাভজনক হওয়ায় আমচাষের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলায় খয়ের শিল্পের ব্যবহৃত কাঁচামাল এই গাছ চাষাবাদ কমে গেছে। তাই নির্ভর করতে হয় অন্যান্য জেলার উৎপাদনের ওপর যার ফলে এখন চড়া দাম দিয়ে কাঁচামাল কিনতে হয় খয়ের উৎপাদনকারীদের। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানীকৃত খয়েরের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় দেশীয় পান ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় এর ওপর নির্ভরশীলতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা থাকলেও ব্যবসায়িক স্বার্থে অধিক মুনাফা লাভের আশায় আমদানীকৃত খয়েরের ওপর দিন দিন নির্ভরশীলতা বাড়ছে।

উপজেলার গোপালপুর গ্রামের খয়ের উৎপাদনকারী কারখানার মালিক এনামুল হক বলেন, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও কাঁচামাল সংকটে একে একে খয়ের উৎপাদনকারী কারখানাগুলো বন্ধ হতে শুরু করে। এ ছাড়া পুঁজি হারিয়ে মূলধন সংকটে রয়েছেন অনেক কারখানার মালিক। চাহিদা কমে যাওয়ায় কেউ কেউ নিজস্ব পুঁজি বিনিয়োগ করে উৎপাদিত খয়ের বাকিতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। অধিকাংশ কারখানার মুলধন সংকট দেখা দিলেও সরকারি সহাযোগিতার থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত।

তিনি বলেন, এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি দরকার স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ। পাশাপাশি খয়ের আমদানিকারকদের খয়ের আমদানিতে নিরুৎসাহিত করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

খয়ের শিল্পের বিষয়ে চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফকরুল ইসলাম বলেন, খয়ের শিল্প চারঘাট উপজেলার ঐতিহ্য। খয়ের শিল্প বাঁচাতে নানা রকম কার্য়ক্রম গ্রহনের প্রচেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জাতীয় সংসদে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। খুব দ্রুতই তার সুফল পাবে খয়ের শিল্পের সাথে জড়িতরা।

আরপি/ এসআই-১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top