রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


ব্রি উদ্ভাবিত জাত

বিঘায় ২২মণ হারে ফলন


প্রকাশিত:
২৯ অক্টোবর ২০২২ ২২:৪৬

আপডেট:
১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৪৪

ব্রি৭৫ ধান কর্তণ উদ্বোধন করছেন ব্রি-র কর্মকর্তাগণ

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ধানের জাত উদ্ভাবন করে আসছে। এই প্রতিষ্ঠানের অবমুক্ত করা উচ্চফলনশীল নতুন ধানের জাত ব্রিধান ৭৫। যা বিঘায় ২২মণ হারে ফলন দিতে সক্ষম।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউপির সারইল গ্রামে রোপা আমন মৌসুমে চাষ করা হয়েছিল ব্রিধান ৭৫। ১১০ দিনে মাথায় কাটা হলো সেই ধান। জমিতে সয়ং উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ এনডিসি, ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর, রাজশাহী রিজিওনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অফিস প্রধান ড. মো: ফজলুল ইসলাম, বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো: শামছুল ওয়াদুদসহ জেলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও শ’চারেক কৃষক-কৃষাণী।

জমি থেকে কাটা ধান মাড়াই করার পর কাঁচাভেজা দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখা গেলো কাঁটায় কাঁটায় প্রায় ২২ মণ! এতে জমির মালিক আবুল হোসেন মাসুদ বেজায় খুশি।

শুধু আবুল হোসেন নয়, এই উপজেলাসহ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে (রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) অন্তত চারশ বিঘা জমিতে ব্রিধান ৭৫ চাষাবাদ করা হয়েছে। পোকামাকড়ের বালাই নেই। সুগন্ধি জাতের এমন ধান চাষের পরও জমিতে সরিষা লাগানোর সুযোগ থাকে। ফলে কৃষকরা ব্রি-৭৫ জাতের নতুন ধান চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন বলে জানা গেছে।

পেশায় শিক্ষকতা হলেও কেতাদুরস্ত কৃষক আবুল হোসেন মাসুদ। কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, “এই ধানের চাল চিকন। এর ভাত হয় ঝরঝরে। আমরা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শ ও সহায়তা নিয়ে ব্রি-ধান ৭৫ চাষ করেছি। উচ্চফলন এবং আরও কিছু সুবিধা হওয়ায় আমাদের দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকও এতে আগ্রহী হয়েছেন। আরো একটি সুবিধে এই ধান হেলে পড়ে না, ইঁদুর লাগে না। আর সবচেয়ে বড় লাভ হলো ধান কেটে সরিষা আমি অতিরিক্ত ফসল হিসেবে ঘরে তুলতে পারব।”

শুক্রবার সকালে গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউপির সারইল গ্রামে কৃষক সমাবেশ করে রাজশাহী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। রোপা আমন সরিষা বোরো শস্যবিন্যাসের উপযোগীতা যাচাইয়ে ব্রিধান ৭৫ জাতের ফসল কর্তন করা হয়। এছাড়া ৪’শ কৃষককে উন্নতজাতের (ব্রিধান-৮৯, ব্রিধান -৯২, ব্রিধান-৮১সহ কয়েকটি) বীজ ধান দেওয়া হয়।

ঐ এলাকার কৃষক আবুল হোসেন, সাইফুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল জব্বারসহ কয়েকজন জানান, আমরা আগামী বছর আরও বেশি এলাকায় এই ধানের চাষ করতে চাই। ২২ মণ হারে ফলন হলে কৃষকরা চাষ করবেই। যেধান ভালো আর চাষ করার পর সরিষা হবে সেটাতেই কৃষক ঝুঁকবে বলে বলেন তারা।

রাজশাহী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: ফজলুল ইসলাম বলেন, এ বছর রাজশাহীর ৪০০ বিঘা জমিতে ব্রি-ধান ৭৫-এর চাষ হয়েছে। আমরা কৃষকদের বীজ ও সার সরবরাহ ছাড়াও অনেক সহায়তা দিয়েছি। গবাদিপশুর খাবার হিসেবে এই ধানের খড় বেশ সুন্দর। ধান হেলে পড়েনা, ফলন বেশি, খেতে সুস্বাদু, রোগ-বালাই কম। চাষিরা ব্রি-৭৫ জাতের সুগন্ধি ধান চাষে লাভবান হয়েছেন।

ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর বলেন, এই ধান অন্য ধানের তুলনায় অনেক উন্নত। এই ধান চাষ করার পর সরিষা ভালো হবে। আমরা তেল জাতীয় ফসলের দিকে পিছিয়ে আছি। দেশে সয়াবিন আমদানির ষড়যন্ত্রের কারণে সরিষা চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বছরে ২৪ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার তেল আমদানি করতে হয়। যদি আমরা সরিষা চাষ করি তাহলে বাড়তি টাকা পাব। দেশ বাঁচবে আপনারাও লাভবান হবেন। এজন্য ফসলের শস্যবিন্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো: শামছুল ওয়াদুদ বলেন, এই ধান যদি আপনারা আরোও আগে লাগাতে পারলে আরোও আগে তুলতে পারবেন। আগের প্রাচীন পদ্ধতি ছেড়ে আধুনিক কৃষির দিকে যেতে হবে। এই ধান কেটে সরিষা, এরপর সরিষা তুলে বোরো হবে। এরবছর ৩০ শতাংশ সরিষা আবাদ বাড়াতে হবে, আগামী বছর ৭০ শতাংশ ও পরবর্তীতে দেড়শ শতাংশে উন্নত করতে হবে।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ এনডিসি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি ইঞ্চি মাটি কাজে লাগানোর কথা বলেছেন। আজ জনগণের উন্নতি হয়েছে। কৃষির উন্নতি হয়েছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। উৎপাদন বেড়েছে। ফলে কৃষিকে অবহেলা না করে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে।

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top